পিছিয়ে কিরণ, আসরে আবার মোদীই

ভোটের আগেই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন কিরণ বেদী। অরবিন্দ কেজরীবালকে টক্কর দিতে তাই ফের আসরে নামতে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিরণকে দলে এনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার আগে পর্যন্ত লড়াইটা ছিল কেজরীবাল বনাম মোদীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:০৪
Share:

ভোটের আগেই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন কিরণ বেদী। অরবিন্দ কেজরীবালকে টক্কর দিতে তাই ফের আসরে নামতে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিরণকে দলে এনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার আগে পর্যন্ত লড়াইটা ছিল কেজরীবাল বনাম মোদীর। রামলীলা ময়দানে তাঁর প্রথম প্রচারসভায় কেজরীবালকে নিশানা করেই আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী। যদিও আপ নেতার নাম নেননি মুখে। মর্যাদার প্রশ্নে দিল্লির তখ্তের এক দাবিদারের সঙ্গে তরজায় নামাটা সঙ্গত মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অমিত শাহরা। সামনে তাই প্রশাসনে দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন একটা মুখ দরকার হয়ে পড়ছিল। কিরণকে এনে সেটাই করতে চেয়েছিলেন অমিতরা। কিন্তু ক’দিনেই এটা বেশ স্পষ্ট, উল্টো ফল হচ্ছে এতে।

Advertisement

গত কালই এবিপি নিউজের সমীক্ষা দেখিয়েছে, কিরণ আসার পরেও দিল্লি দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন কেজরীবাল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দিল্লিবাসীর প্রথম পছন্দ তিনিই। বিজেপির নিজেদের সমীক্ষাও তা-ই বলছে। কেজরীবালের সভায় যে ভিড় হচ্ছে, কিরণ সেই আবেগ টানতে পারছেন না। তার উপর বাইরে থেকে কিরণকে দলে নিয়ে এসে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ায় বিজেপির অনেক নেতা ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় মোদী আজ কেন্দ্রের হাফ ডজন মন্ত্রীকে শেষ বাজারে আসরে নামালেন। যাঁদের নেতৃত্ব দেবেন অরুণ জেটলি। শুধু তাই নয়, ভোটের আগে এই ক’দিনে মোদী নিজেও চারটি জনসভা করবেন দিল্লিতে।

মোদীর পরামর্শে আজ থেকেই জেটলি দিল্লি বিজেপি দফতরে দু’ ঘণ্টা করে বসতে শুরু করেছেন। মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তুতির মাঝেও। পাশাপাশি কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকেও আগামী ক’দিন দিল্লি নির্বাচনের জন্য সময় দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে দিয়েও দিনে গড়ে তিনটে সভা করানো হচ্ছে। যা দেখে বিজেপি কর্মীরাই বলছেন, এটা প্রায় কার্পেট বম্বিং! এর পিছনে সব থেকে বড় কারণ হল, কিরণকে মুখ করেও বিজেপি দিল্লি জয় নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না। কিরণের বিভিন্ন মন্তব্যও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে দলের নেতাদের।

Advertisement

যে কৃষ্ণনগর আসন থেকে কিরণ ভোটে লড়ছেন, সেটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের পাঁচ বারের জেতা আসন। দলের নির্দেশে হর্ষ বর্ধন এত দিন কিরণের সঙ্গে সভায় সামিল হচ্ছিলেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, কিরণের আচরণে ক্ষুব্ধ হর্ষ বর্ধন আর কিরণের সফরসঙ্গী হতে রাজি নন। গত কাল থেকে তিনিও আর সভায় যাননি। কিরণ আসার পরে দিল্লি বিজেপি সভাপতি সতীশ উপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিজেপির অনেক নেতা দলকে জেতানোর উৎসাহও হারিয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থায় দলের হাল ধরতে বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের আসরে নামালেন মোদী।

বিজেপি সূত্রের মতে, এই নেতাদের শেষ বেলায় একজোট করে ঝাঁপানোর কাজে উৎসাহ দিতেই জেটলির মতো মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্যকে দিল্লি দফতরে নিয়ে আসা হয়েছে। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেনের বক্তব্য, “নির্বাচনের কাজে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ব্যবহার করাটা নতুন কিছু নয়। অতীতেও অনেক নির্বাচনে এ ভাবে দলের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধের ময়দানে সামিল হয়েছেন।” যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, কিরণকে এনে যে মোক্ষম চাল দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল, সেটি ঠিক মতো কাজ করছে না। যে কারণে ভোটের মাত্র ১৩ দিন আগে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত কেজরীবাল বনাম মোদীরই হতে চলেছে।

জোড়া ভোটার কার্ড, বিতর্কে বেদী

খোদ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীরই নাকি জোড়া ভোটার কার্ড! ঠিকানা আলাদা। কী ভাবে এমনটা সম্ভব হল? দিল্লির আসন্ন ভোটে বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদীর এই কার্ড-বিভ্রাট নিয়ে তদন্তে নামছে নির্বাচন কমিশন। খতিয়ে দেখা হবে, আদৌ তিনি এর মধ্যে কোনও একটি কার্ড বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন কিনা। সমালোচনায় মুখর দুই বিরোধী পক্ষ কংগ্রেস ও আপ। নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, কিরণ বেদীর নামে যে দু’টি কার্ড রয়েছে, তার একটিতে উদয় পার্ক এবং অন্যটিতে তালকাটোরা লেনের ঠিকানা রয়েছে। কিরণ বুধবার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement