ঘোড়সওয়ার। বৈষ্ণোদেবী দর্শনে মোদী। ছবি: পিটিআই।
পাঁচ অঞ্চলে পাঁচ ওজনদার প্রার্থী দিয়েই উত্তরপ্রদেশের কেল্লা জয় করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। গোবলয়ের সুবিশাল এই রাজ্যের আশিটি আসনই পাখির চোখ তাঁর। তার সিংহভাগই ঝুলিতে পুরতে চাইছেন তিনি। তাই আসন ধরে জয়ের সম্ভাবনা যাচাই করে প্রার্থী বাছাই করতে হয়েছে। এবং জেতার সম্ভাবনা নেই মনে করেই এ রাজ্য থেকে এক জনও মুসলিমকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। এর পাশাপাশি এলাকায় দলের শক্তি ও প্রার্থীর ওজন বুঝেও ঘুঁটি সাজিয়েছেন মোদী ও তাঁর সেনাপতিরা।
মোদী নিজে দাঁড়িয়েছেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে। যাতে এ রাজ্যে শুধু নয়, পাশের রাজ্য বিহারেও তার প্রভাব পড়ে। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে মোদী-ঝড় তুলতে গিয়ে রাজ্যের বাকি অঞ্চলের ভারসাম্য যাতে হারিয়ে না যায়, সে দিকেও নজর দিতে হয়েছে। তাই বাকি চার অংশেও ওজনদার প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশে বিজেপির যা-ও বা কিছুটা শক্তি আছে, পূর্বে এবং অবধ অংশে অর্থাৎ মধ্য উত্তরপ্রদেশে তারা অনেকটাই দুর্বল। যে কারণে মোদী লড়ছেন পূর্বে। আর অবধে প্রার্থী হয়েছেন স্বয়ং দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তিনি রাজ্যের রাজধানী লখনউ থেকে লড়ছেন। তাঁর নিজের পুরনো কেন্দ্র গাজিয়াবাদে প্রার্থী করা হয়েছে প্রাক্তন সেনা প্রধান ভি কে সিংহকে। যাতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ এলাকায় তিনি প্রভাব ফেলতে পারেন। আর বুন্দেলখণ্ড এলাকায় প্রার্থী উমা ভারতী। মধ্যপ্রদেশ লাগোয়া সেই এলাকাতেই এখন বিধায়ক তিনি। ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ব্রজ এলাকাতেও হেভিওয়েট প্রার্থী খুঁজছিলেন মোদী। শেষ পর্যন্ত মথুরা থেকে হেমা মালিনীকে প্রার্থী করা হয়েছে।
তিনটে একে এখন পাকিস্তানের শক্তি। একে ৪৭, একে অ্যান্টনি এবং একে-৪৯। এই একে-৪৯ এমন একটা
দলের জন্ম দিয়েছেন, নিজেদের ওয়েবসাইটে যারা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলে দেখায়।
নরেন্দ্র মোদী
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মুখে এই ধরনের কথা কি মানায়? মুখোমুখি বিতর্ক বারবার উনি এড়িয়ে যাচ্ছেন?
ভোটে দুর্নীতিগ্রস্তদের টিকিট দেওয়া নিয়েই বা মৌনী কেন?
অরবিন্দ কেজরীবাল
মোদী-ঘনিষ্ঠ ও উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা নেতা অমিত শাহদের বক্তব্য, গত লোকসভায় এ রাজ্যে মাত্র ১০টি আসন জিতেছিল বিজেপি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৯টি আসনে। এ বারে উত্তরপ্রদেশকেই দিল্লি দখলের ভিত করতে হলে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি আসনে জিততে হবে। তাই প্রতিটি আসনে চুলচেরা বিচার করেই এগোতে হয়েছে তাঁদের। গোটা উত্তরপ্রদেশে মোদীর হাওয়া থাকলেও লড়ইটা সহজ নয় বুঝেই অনেক ভেবে বিশাল এই রাজ্যকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে ওজনদার প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এত হিসেব কষতে গিয়ে রাজ্যে দলের অনেককে ক্ষুণ্ণও করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যে ভাবে মুরলীমনোহর জোশীকে বারাণসী থেকে কানপুরে ঠেলতে হয়েছে, উপেক্ষা করা হয়েছে লালজি টন্ডন-কলরাজ মিশ্রদের সেটাকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না রাজ্যের ব্রাহ্মণরা। টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের তুলনায় ঠাকুররা অনেক বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় গোসা হয়েছে তাঁদের। ব্রাহ্মণরা মনে করছেন, বিজেপি এ বারে ব্রাহ্মণদের উপেক্ষা করে ঠাকুরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তার উপর মোদী তাঁর অনগ্রসর শ্রেণির তাস খেলছেন। ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে বিজেপির নকশা।
মথুরায় হেমা মালিনী ও গাজিয়াবাদে ভি কে সিংহকে প্রার্থী করাতেও স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের অসন্তোষ রয়েছে। উমা ভারতীও মধ্যপ্রদেশ থেকে লড়তে চাইছিলেন। উমার অসন্তোষকে উস্কে দিয়ে আজ যোগগুরু রামদেব বলেছেন, উমার উচিত ছিল রায়বরেলীতে সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া। যার অর্থ, উমার রাজনৈতিক উচ্চতা এতটাই যে তিনি সনিয়াকেও হারিয়ে দিতে পারতেন। বিজেপি সূত্রের খবর দল এই প্রস্তাবটি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। রাতে উমাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি অবশ্য এর সত্যতা স্বীকার করেননি।
বিহারে শাহনওয়াজ হুসেনকে প্রার্থী করলেও উত্তরপ্রেদেশে কোনও সংখ্যালঘু প্রার্থী না থাকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এটাকে হিন্দুত্বের বার্তা হিসেবে সংবাদমাধ্যমের একাংশ ও বিরোধী পক্ষ তুলে ধরতে চাইলেও বিজেপি নেতাদের স্পষ্ট যুক্তি, মুলায়ম সিংহ যাদবের দল রাজ্যে যে ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করছে, তার সুফল পেতে পারে বিজেপিও। এ অবস্থায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনাটাই একমাত্র বিচার্য বলে মনে করেছেন অমিত শাহরা। মোদী যাতে পৌঁছে যেতে পারেন দিল্লির মসনদে, সে কথা মাথায় রেখেই গোবলয়ের পাঁচ অঞ্চলে পাঁচমুখী বাণের ঘুঁটি সাজিয়েছেন তাঁরা। আর মোদী চাইছেন সব অসন্তোষ ও উস্কানি পাশে সরিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুক দল।