পাকিস্তান যুদ্ধ জয়ের উৎসবেও প্রাক্তন ফৌজি-নিশানায় মোদী

ইন্ডিয়া গেট চত্বরে উর্দিধারী জওয়ানদের ভিড়। কানে তালা লাগিয়ে উড়ে যাচ্ছে যুদ্ধবিমান। চমকে উঠে অনেকেই ভাবছেন, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া এত আগেই শুরু হয়ে গেল নাকি!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

চলছে পাকিস্তান যুদ্ধ বিজয় দিবসের মহড়া। শনিবার নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটে। ছবি: প্রেম সিংহ।

ইন্ডিয়া গেট চত্বরে উর্দিধারী জওয়ানদের ভিড়। কানে তালা লাগিয়ে উড়ে যাচ্ছে যুদ্ধবিমান। চমকে উঠে অনেকেই ভাবছেন, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া এত আগেই শুরু হয়ে গেল নাকি!

Advertisement

প্রজাতন্ত্র দিবস নয়। মহড়া চলছে ‘ইন্দ্রধনুষ’-এর। ১৯৬৫-র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের স্বর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদী সরকার রবিবার যে উৎসবের আয়োজন করেছে, তারই প্রস্তুতি। এক সপ্তাহ ধরে ওই যুদ্ধের নানা স্মৃতি তুলে ধরতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে ‘শৌর্যাঞ্জলি’ নামের প্রদর্শনী চলছে। ২৫ কোটি টাকার আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্মদিনে নিজে এই প্রদর্শনী ঘুরে শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও প্রদর্শনীতে গিয়েছেন। ওই যুদ্ধে শহিদ ফৌজিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তবে যুদ্ধ জয়ের স্বর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মধ্যেই অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠেছেন অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিরা। ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর যাবতীয় শর্ত মেনে নেওয়ার দাবিতে অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের একাংশ এখনও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারের এই উৎসবে যোগ দেবেন না। ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি তথা তিন সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কম্যান্ডার প্রণব মুখোপাধ্যায় ’৬৫-র যুদ্ধর স্বর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চা-পানের আসরে অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই অনুষ্ঠানও বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

Advertisement

মোদী সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তাতে খুশি নন বিক্ষোভকারীরা। প্রাক্তন ফৌজিদের সংগঠনের মুখপাত্র অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অনিল কল বলেন, ‘‘সরকার যা ঘোষণা করেছে, তা আসলে ‘এক পদ, এক পেনশন’ নয়। বরং সেটাকে পেনশন বাড়ানোর ঘোষণা বলা যেতে পারে। এখনও সাতটি খামতি রয়েছে। তাই স্বর্ণজয়ন্তী উৎসব, রাষ্ট্রপতির চা-পানের নিমন্ত্রণও বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’’ রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেও সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

যুদ্ধ জয়ের উৎসব নিয়ে সরাসরি সমালোচনা না করলেও কংগ্রেস বলছে, এ সব আসলে উগ্র জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে মোদী সরকার তথা বিজেপির পরিকল্পনা। মণীশ তিওয়ারির মতো কংগ্রেস নেতারা দাবি তুলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের পেনশনের সমস্যার সমাধান করতে পারলেই জওয়ানদের উপযুক্ত সম্মান জানানো হবে।

দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের যুক্তি, ‘‘১৯৬৫ হল প্রথম বড় মাপের যুদ্ধ, যেখানে ভারত সহজে জিতে গিয়েছিল। যে কোনও উন্নত রাষ্ট্রই নিজের ইতিহাস ও শহিদদের স্মরণ করে থাকে।’’ যুদ্ধ জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে সেনা, বায়ুসেনার তরফে বিশেষ বইও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে পাকিস্তান সেনার নিশানার মুখেও পড়েছে মোদী সরকার। কারণ পাকিস্তানেও ১৯৬৫-র যুদ্ধ শুরুর দিনটি ‘প্রতিরক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ফের যুদ্ধ বাধলে তার কঠিন মূল্য চোকাতে হবে ভারতকে। ভারতের সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ অবশ্য আগেই বলে রেখেছেন, ভবিষ্যতে ভারতীয় সেনা যে কোনও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। পাক সেনাপ্রধান কাশ্মীরকে ‘অমীমাংসিত বিষয়’ আখ্যা দিয়ে সেই প্রসঙ্গও খুঁচিয়ে তুলেছেন। পাল্টা আক্রমণে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে নরম হওয়ার প্রশ্নই নেই। ভারত পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মীরও উদ্ধার করতে চায়।

একটি যুদ্ধের স্মৃতিতে ফের যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ তৈরি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। এআইসিসি মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘যুদ্ধ জয় অবশ্যই গর্বের। যে কোনও নাগরিকের সেই গর্ব করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি।’’ আজ একই মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাও। তাঁর বক্তব্য, কাশ্মীর কোনও দিনই পাকিস্তানের

অন্তর্ভুক্ত হবে না। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রধান বিষয় কাশ্মীরই। তাই এ নিয়ে আলোচনাও জরুরি। ফারুক বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার হুমকি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। দু’দেশের মধ্যে আলোচনা দরকার। কিছু বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছনো জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement