দিল্লি জয়ে কেজরীবালই পয়লা নিশানা মোদীর

দেড় দশক ধরে দিল্লিতে সরকার চালিয়েছে যারা, সেই কংগ্রেসের নাম প্রায় মুখেই আনলেন না। বরং দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করেই আজ অরবিন্দ কেজরীবালকেই নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে একদা এই কেজরীবালই দিল্লি তথা দেশ জুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়া তুলে দিয়েছিলেন। রামলীলা ময়দানের মঞ্চে অনশনরত অণ্ণা হজারেকে সামনে রেখে ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৮
Share:

একযোগে প্রচার। রামলীলা ময়দানে মোদী ও অমিত শাহ। ছবি: রয়টার্স।

দেড় দশক ধরে দিল্লিতে সরকার চালিয়েছে যারা, সেই কংগ্রেসের নাম প্রায় মুখেই আনলেন না। বরং দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করেই আজ অরবিন্দ কেজরীবালকেই নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে একদা এই কেজরীবালই দিল্লি তথা দেশ জুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়া তুলে দিয়েছিলেন। রামলীলা ময়দানের মঞ্চে অনশনরত অণ্ণা হজারেকে সামনে রেখে ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের। তাতে বিজেপির লাভ বই ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আজ সেই রামলীলার মঞ্চ থেকেই কেজরীবাল বধে নামলেন মোদী। বললেন, “কোনও নৈরাজ্যবাদীকে নয়, দিল্লির প্রয়োজন একজন সুশাসকের। সেই সুশাসন এক মাত্র বিজেপিই দিতে পারে ।”

দিল্লিতে ভোটের দিনক্ষণ অবশ্য ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। আগামী সপ্তাহের যে কোনও দিন ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু লড়াইয়ের সুর উঁচু তারে বেঁধে দিতে বিজেপি প্রচার শুরু করেছে আগেভাগেই। সেই সঙ্গে এ-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে দিল্লি বিধানসভা ভোটেও মোদীই হচ্ছেন বিজেপির লড়াইয়ের মুখ। ‘মাফলার ম্যান’-এর সঙ্গে দ্বৈরথ হবে তাঁর। ফলে প্রশাসন সামলানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে অনেকটা সময় দিতে হবে ভোট প্রচারেও।

Advertisement

রামলীলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেজরীবালকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “কোনও রাজনীতিক নিজেকে নৈরাজ্যবাদী বলে ঘোষণা করছে, এমনটা কেউ কখনও দেখেছেন? আসলে যে কাজটা যে করতে পারে, তাকেই করতে দেওয়া উচিত। যে ভালো গাড়ি চালাতে পারে, তাকে রান্না করতে না দেওয়াই ভালো। রোজ রোজ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করায় ওঁদের মাস্টারি রয়েছে। আর আমাদের মাস্টারি সরকার চালানোয়।” এ দিন দিল্লির মানুষের জন্য কিছু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ, বস্তিবাসীদের জন্য পাকা বাড়ি, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ইত্যাদি হল ঘোষণার অন্যতম বিষয়। এই প্রথম বিদ্যুত ক্ষেত্রের পরিষেবা নিয়ে চমক দিলেন মোদী। তাঁর ঘোষণা, বিজেপি ক্ষমতায় এলে গ্রাহকেরা পছন্দ মতো বিদ্যুত সংস্থাকে বেছে নিতে পারবেন। ভারতে যে ভাবনা একেবারে নতুন।

মাত্র ৪৯ দিন সরকার চালিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও জন লোকপাল বিল পাশের দাবিতে রাস্তায় ধরনায় বসেছিলেন তিনি। এমনকি নিজেকে নৈরাজ্যবাদী বলেও ঘোষণা করেছিলেন। যদিও খোদ কেজরীবালই পরে স্বীকার করেছিলেন, ইস্তফার সিদ্ধান্ত ছিল ঐতিহাসিক ভুল। মানুষ এতে অসন্তুষ্ট হয়েছিল। উপরন্তু কংগ্রেস-বিজেপি পলাতক আখ্যা দিয়েছিল তাঁকে। আপের সেই ক্ষতটাই আজ কৌশলে খুঁচিয়ে দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, “যাঁরা আপনাদের অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল, তাঁদের শাস্তি দিন।”

মোদীর সভা শেষ হতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন কেজরীবাল। বলেন, “মোদীর কথা থেকেই স্পষ্ট যে দিল্লির জন্য কোনও ইতিবাচক কর্মসূচি তাঁদের নেই। তাই ব্যক্তি আক্রমণ করছেন। কিন্তু আপ-এর রাজনৈতিক সংস্কৃতি তা নয়। আমরা ব্যক্তি আক্রমণে যাব না।” মোদী সরকারকে ‘ইউ টার্ন সরকার’ বলেও সমালোচনা করেন কেজরীবাল।

অনেকেই মনে করেন, বিজেপি ও আপ দু’য়ের কৌশলই পরিস্কার। গত বিধানসভা ভোটে আপ বিজেপির যাত্রা ভঙ্গ করেছিল। এখন মোদী-অমিত শাহ দেখছেন কংগ্রেসের কোমর এমনিতেই ভেঙে গিয়েছে। তুলনায় আপ-ই বড় প্রতিপক্ষ। তাই আজ কংগ্রেসকে অল্পসল্প আক্রমণ করলেও মোদী-শাহ আপ-কেই মূল নিশানা করছেন। কৌশলে কংগ্রেসকে আরও অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, মোদী বিরোধিতায় নিজেকে অন্যতম মুখ হিসেবে তুলে ধরে কেজরীবাল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটেরও ভাগ পেতে চাইছেন।

তা হলে কংগ্রেস কি করছে?

এই প্রথম কোনও নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হওয়ার আগেই প্রার্থী তালিকা এক প্রস্ত ঘোষণা করেছে সনিয়া গাঁধীর দল। কিন্তু এখনও অগোছালো ঘর কংগ্রেসের। তা ছাড়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলি-র গোষ্ঠী কোন্দলও অব্যহত। যদিও এর মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু করতে ১৮ তারিখ রামলীলা ময়দান বুক করেছে কংগ্রেস। কিন্তু গত কাল কংগ্রেস নেতারা ভাবছিলেন, সনিয়ার সভায় যদি মোদীর সভার মতো ভিড় না হয়, তা হলে বেইজ্জতি হবে! আগে হরিয়ানা থেকে লোক এনে মাঠ ভরাতো কংগ্রেস। এখন সেখানেও নিজেদের সরকার নেই। তবে কংগ্রেস আজ কিছুটা আশ্বস্ত যে ঘোষণা মতো রামলীলা ময়দানে বিজেপি-র সভায় তেমন ভিড় হয়নি। বিজেপি দাবি করেছিল, রামলীলায় এক লক্ষ মানুষের ভিড় হবে। সেই তুলনায় অর্ধেক জমায়েত হয়েছে।

এই অবস্থায় সম্ভবত ১৮ তারিখ রামলীলায় সভা করবেন সনিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement