ডেরা-বিতর্কে সেন্সর বোর্ড প্রধানের ইস্তফা

বিতর্কের কেন্দ্রে এক ঘণ্টার একটি ছবি। যার মূল ভূমিকায় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচা সৌদার প্রধান গুরমিত রামরহিম সিংহ। ‘মেসেঞ্জার অব গড’ (এমএসজি) নামে সেই ছবি নিয়ে বিতর্কের জেরেই সেন্সর বোর্ডের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লীলা স্যামসন। কেন? সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল (এফসিএটি) ছবিটিকে ছাড় দিয়েছে বলে খবর। এই টানাপড়েনেই ইস্তফা দিয়েছেন লীলা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২
Share:

বিতর্কের কেন্দ্রে এক ঘণ্টার একটি ছবি। যার মূল ভূমিকায় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচা সৌদার প্রধান গুরমিত রামরহিম সিংহ। ‘মেসেঞ্জার অব গড’ (এমএসজি) নামে সেই ছবি নিয়ে বিতর্কের জেরেই সেন্সর বোর্ডের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লীলা স্যামসন।

Advertisement

কেন? সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল (এফসিএটি) ছবিটিকে ছাড় দিয়েছে বলে খবর। এই টানাপড়েনেই ইস্তফা দিয়েছেন লীলা।

এফসিএটি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের আওতায় থাকা বিধিবদ্ধ সংস্থা। কোনও ছবিতে সেন্সর বোর্ডের আপত্তি থাকলে, সংশ্লিষ্ট ছবির নির্মাতা এফসিএটি-র দ্বারস্থ হতে পারেন। ‘মেসেঞ্জার অব গড’ ছবিটি প্রদর্শনের ব্যাপারে এফসিএটি সায় দিয়েছে বলে শুনেছেন লীলা। তাঁর বক্তব্য, “আমি বিষয়টা শুনেছি। তবে লিখিত ভাবে এফসিএটি-র নির্দেশ দেখিনি। তবে এই সিদ্ধান্তে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন-কেই (সিবিএফসি) বিদ্রুপ করা হয়েছে।” লীলা স্যামসন গত কাল রাতেই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আজ সরকার তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে।

Advertisement

এ দিকে, রামরহিমের ছবি নিয়ে এ দিন উত্তর ভারতের নানা জায়গায় অশান্তির ঝড় বয়ে যায়। ভাটিন্ডা, অমৃতসর, গুড়গাঁওয়ে একাধিক শিখ সংগঠনের পক্ষে মিছিল বার করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তাঁদের দাবি, ছবিটিতে শিখ ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। ছবিটি মুক্তি পেলে আরও অশান্তি বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।

অন্য দিকে ডেরার তরফে দাবি, মাদকের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোই ছবির বিষয়বস্তু। এফসিএটি-র ছাড় মেলায় এ দিন গুড়গাঁওয়ের লেজার ভ্যালি গ্রাউন্ডে ছবির প্রিমিয়ারের আয়োজন করা হয়েছিল। চার পাশে ছড়ানো ছিল জায়ান্ট স্ক্রিন। ছিলেন দু’লক্ষেরও বেশি ভক্ত। যাদের অনেকেরই গায়ে এমএসজি লেখা টি শার্ট। দু’হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে টিকিট! রংচঙে পোশাকে মোটরবাইকে চড়ে বেশ নায়কসুলভ ভঙ্গিতেই সেখানে ঢুকে পড়েন রামরহিম সিংহ। কিন্তু সব উৎসাহে জল ঢেলে ছবি দেখানোই বানচাল হয়ে যায়। বিক্ষোভের জেরে নামতে হয় পুলিশকে। যাতে ক্ষুব্ধ ছবির প্রধান চরিত্র গুরমিত। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বলছি আগে ছবিটা দেখুন।”

এ দিন লীলার ইস্তফা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল ডেরা-প্রধানকে। তিনি উত্তরে বলেন, “আমি ওঁর নাম জানি না। উনি কেন পদত্যাগ করেছেন, আমি কী ভাবে জানব? ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।”

লীলা নিজে অবশ্য বলছেন, শুধু রামরহিমের ছবি নয়, বোর্ডের কাজে ধারাবাহিক হস্তক্ষেপও তাঁর ইস্তফার কারণ। বেশ কিছু ক্ষেত্রেই তাঁদের কাজে জোর খাটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্যানেল সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে দুর্নীতি, দাবি লীলার। সব চেয়ে বড় কথা, বোর্ডের সদস্যদের শেষ বার বৈঠক হয় গত বছর জানুয়ারিতে। তার পর এক বছর পার হতে চললেও অর্থাভাবে বোর্ড সদস্যদের বৈঠক করা যায়নি বলে অভিযোগ। লীলার পরে বোর্ডের আর এক সদস্য ইরা ভাস্করও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেমা স্টাডিজের এই অধ্যাপিকা বলেছেন, “আজ রাতের মধ্যেই ইস্তফা দিচ্ছি। লীলাজির পদত্যাগের জেরেই আমার এই সিদ্ধান্ত।” আরও পাঁচ-ছ’জন সদস্য বোর্ড থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন বলে জানানো হয়েছে।

তবে লীলা বা ইরার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ফিল্মে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরকার সব সময়েই দূরত্ব বজায় রেখেছে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের বক্তব্য, “সেন্সর বোর্ডকে আমরা বরাবরই শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছি।” লীলা সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে রাঠৌর বলেন, কোনও বোর্ড সদস্যকে কোনও কাজে বাধ্য করা হয়েছে, এমন প্রমাণ মিললে সরকার অবশ্যই পদক্ষেপ করবে। ‘মেসেঞ্জার অব গড’ ছবি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “এফসিএটি-ই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাও সেন্সর বোর্ডকে বুঝতে হবে।” রাঠৌরের মতে, এফসিএটি-র মতো ট্রাইব্যুনালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং প্রবীণ সাংবাদিক রয়েছেন। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা বিবেচনা করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement