জঙ্গি আতঙ্কে কোকরাঝাড়ের শ’আটেক শরণার্থী কুমারগ্রামে

জঙ্গি আতঙ্কে অসমের কোকরাঝাড়ের কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো মানুষের জীবন বদলে গিয়েছে। ভিটে-মাটি ছেড়ে বুধবার থেকে তাঁরা এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের অসম লাগোয়া কুমারগ্রামের নানা ত্রাণ শিবিরে। কেউ দিন কাটাচ্ছেন স্কুল ঘরে, কেউ কমিউনিটি হলে।

Advertisement

রাজু সাহা

কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

জঙ্গি আতঙ্কে অসমের কোকরাঝাড়ের কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো মানুষের জীবন বদলে গিয়েছে। ভিটে-মাটি ছেড়ে বুধবার থেকে তাঁরা এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের অসম লাগোয়া কুমারগ্রামের নানা ত্রাণ শিবিরে। কেউ দিন কাটাচ্ছেন স্কুল ঘরে, কেউ কমিউনিটি হলে।

Advertisement

তাঁদের মধ্যে আছেন কোকরাঝাড়ের হুপনামারি গ্রামের বাসিন্দা বাবলু হাঁসদা। তাঁর আড়াই বিঘা জমি রয়েছে। বাহামান টুডুর রয়েছে সাড়ে তিন বিঘা। চাষ করেই সংসার চলে। দিনের বেশিরভাগ চাষের মাঠেই কাটত। শুধু বাবলু বা বাহামান নন, হুপনামারি, সিমলাবাড়ি, কুশালবাড়ির মতো আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার এটাই ছিল নিত্য দিনের রুটিন। বুধবার থেকে বদলে গিয়েছে তাঁদের জীবন। জঙ্গি হানার জেরে সঙ্কোশ নদী পেরিয়ে এসে এখন তাঁরা আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের নানা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে কোকরাঝাড়ের বিভিন্ন গ্রামের ৭৫৭ জন বাসিন্দা মোট ৪টি শিবিরে রয়েছেন। বাবলু ও বাহামান জানালেন, বুধবার সকালেও খেতে কাজ করেছেন। দুপুরে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, পাশের গ্রামে জঙ্গি হানা চলছে। নিরীহ গ্রামবাসীদের নির্বিচারে গুলি করে মারা হচ্ছে। বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। খবর পান, তাঁদের গ্রামেও জঙ্গিরা হানা দেবে। এর পরেই বাড়ি ঘর ফেলে প্রায় খালি হাতে কুমারগ্রামে ঢুকে পড়েন তাঁরা। কেউ আত্মীয়-পরিচিতদের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। অনেকেই কোথাও আশ্রয় না পেয়ে স্কুলের মাঠে জড়ো হন। পরে সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনকে খবর দিলে শরণার্থী শিবির খোলা হয়। দু’দিন ধরে এই শিবিরে ঠাসাঠাসি করে অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, কতদিন এ ভাবে থাকতে হবে? বাড়ি ফিরে ঘরদোর দেখতে পাবেন তো? বাহামান বলেন, “যাতে আমরা ফিরতে পারি, সেই ব্যবস্থা করুক সরকার।”

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কলকাতায় বৃহস্পতিবার বলেন, “যে সব আদিবাসী ভাইবোনেরা ঘর ছেড়ে আমাদের রাজ্যে এসেছেন, তাঁদের সমস্ত রকম সাহায্য সহযোগিতা আমরা করছি এবং করব।” কুমারগ্রাম ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪টি শিবির খোলা হয়েছে কুমারগ্রামে চ্যাংমারি কমিউনিটি হল, পূর্ব শালবাড়ি বিএফপি স্কুল, বালাপাড়া প্রাথমিক স্কুল এবং বিত্তিবাড়ি প্রাথমিক স্কুলে। চ্যাংমারিতে ৩৫৭ জন, বিত্তিবাড়িতে ২৭ জন, বালাপাড়ায় ২৩০ জন এবং পূর্ব শালবাড়ি শিবিরে ১৫০ জন শরণার্থী রয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল জানিয়েছেন, অসম প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অসম লাগোয়া আলিপুরদুয়ারের সব ক’টি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শিবিরগুলিতে পুলিশ ও সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে।

কুমারগ্রামের বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ব্লক প্রশাসনের তরফে শরণার্থীদের শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল ক্যাম্পও খোলা হয়েছে। দু’বেলা রান্না করা খাবার ও এক বেলা শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। পানীয় জলের জন্য বসানো হয়েছে নলকূপ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement