বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন নিজেই। এ বার কালো টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গে বিরোধীদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়লেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রাম জেঠমলানী থেকে পি চিদম্বরমএমনকী সারদা নিয়ে চাপের মুখে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস পর্যন্ত কালো টাকা উদ্ধারে সরকারের অবস্থান ও মনোভাব সম্পর্কে আঙুল তুলে দিয়েছে।
সব থেকে কড়া ভাষায় জেটলিকে নিশানা করেছেন জেঠমলানী। বিদেশি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতীয়দের কালো টাকা খুঁজে বের করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান তিনিই। তার জেরেই সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, কালো টাকার কারবারিদের সবার নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর পরেই জেঠমলানী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সরকারের এ ক্ষেত্রে যা যুক্তি দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, আসলে সরকার নয়, অপরাধীরাই সওয়াল করছে। এ বার বক্তব্যে ঝাঁঝ বাড়িয়ে আইনজীবী ও অর্থমন্ত্রী জেটলিকে তিন পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী জেঠমলানী। সেখানে তিনি অভিযোগ এনেছেন, ‘ভুল পরামর্শের শিকার’ হয়েই আদালতে সরকার এমন অবস্থান নিয়েছে। জেটলি রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন বা এখন অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরেও কালো টাকা উদ্ধারের বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি। জেঠমলানী লিখেছেন,“আমার গভীর সন্দেহ এবং আপনার কাজও দেখিয়ে দিচ্ছে, আপনি চান না যে সত্য প্রকাশিত হোক।”
নাম প্রকাশ করার সমস্যার প্রসঙ্গে জার্মানির মতো দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বৈত কর এড়ানো সংক্রান্ত চুক্তি প্রসঙ্গ টেনে এনেছিল সরকার। জেঠমলানী লিখেছেন, “জার্মানরা কখনও এই বিষয়ে কিছু বলেনি। আমরাই একে রাখতে চেয়েছি যাতে তদন্ত কোনও অভিমুখ খুঁজে না পায়, দুর্নীতির পাণ্ডারাও ধরা না পড়ে।” নির্বাচনে দেওয়া নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতিকে জেটলি ধ্বংস করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ এনেছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা জেঠমলানী। পরে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর মন্তব্য, “বিজেপি নয়, দেশের মানুষের ভালমন্দ নিয়েই আমি চিন্তিত।”
কালো টাকার বিষয়ে ক’দিন ধরেই জেটলির সঙ্গে কংগ্রেসের চাপানউতোর আজ নতুন মাত্রা পেয়েছে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম মাঠে নামায়। জেটলি বলেছিলেন, বিদেশি ব্যাঙ্কে কালো টাকা রেখেছেন, এমন লোকেদের নাম প্রকাশ পেলে সমস্যা হবে কংগ্রেসেরই। চিদম্বরমের জবাব, “নাম যাই থাকুক, তাতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না। কেননা, এটা ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব পাপ।”
তবে কালো টাকা উদ্ধারের বিষয় নিয়ে এ দিন অন্যদের পাশাপাশি বিজেপিকে নিশানা করতে চেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। সারদা নিয়ে চাপে থাকা দলের অভিযোগ, কালো টাকা উদ্ধারে ভোটের সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে বিজেপি। কালো টাকার কেলেঙ্কারিকে সরকার ঢাকতে চাইছে ও এ নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির মন্ত্রীরাও স্বচ্ছতা দেখাচ্ছেন না। দলের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, সব নাম একসঙ্গে প্রকাশিত হোক। কেননা, একটা-দুটো নাম প্রকাশ করে গুজব রটানোর প্রয়োজন নেই।
তবে এই বিতর্ক চলার মধ্যেই অর্থমন্ত্রী জেটলি কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তা হল, বিদেশি ব্যাঙ্কে কালো টাকা রেখেছেন, এমন ব্যক্তিদের নাম সরকার প্রকাশ করবে। আর তাঁর যুক্তি, আদালতে এই নাম জানালে তা বিদেশের সঙ্গে চুক্তিকেও লঙ্ঘন করবে না এবং সেখান থেকে সংবাদমাধ্যমও নামগুলি জানতে পারবে।