সৌহার্দ্য। হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পাশ হওয়ার পরই বাংলাদেশ সফরে যেতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন মোদী। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই ঢাকা যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মোদীর সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। ভারতীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এক সঙ্গে দু’টি চুক্তি নিয়ে কালক্ষেপ না করে, প্রথমে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে তার পর তিস্তা নিয়ে পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়ে গেলেও কেন এই অধিবেশনে তা রাজ্যসভায় পাশ করা গেল না, তার ব্যাখ্যাও বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে। বলা হয়েছে, ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত এই বিলটি নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট দশ দিন আগে এসেছে। সেই বিলটিকে খতিয়ে দেখে আইনি মতামত নিতে এক সপ্তাহ লেগেছে। এ বার মন্ত্রিসভায় তা পাশ করিয়ে শীতকালীন অধিবেশনের শেষ কয়েক দিনের মধ্যে রাজ্যসভায় পেশ করা সম্ভব নয়। সামনের বাজেট অধিবেশনে সংসদের দুই কক্ষে বিলটি পাশ করিয়ে নিতে চায় দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক জন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ। এর আগে তিনি বাংলাদেশ সংসদে স্পিকার পদে ছিলেন। দিল্লির যুক্তির সারবত্তা তিনি বিলক্ষণ বুঝেছেন।
আজ গোটা দিন বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে দফায় দফায় ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আব্দুল হামিদ। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “যদিও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদটি প্রশাসনিক নয়, সাংবিধানিক প্রধানের, কিন্তু আজকের বৈঠক হয়েছে পুরোদস্তুর কূটনৈতিক আবহে। বাংলাদেশকে যে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হচ্ছে, সেই বার্তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।” তাঁর ব্যাখ্যা, সংসদের ব্যস্ততা এড়িয়ে হায়দরাবাদ হাউসে এসে আব্দুল হামিদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা করেছেন মোদী। পরে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে তাঁর। সন্ধ্যায় তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া ভোজসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা হয় হামিদের।
তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে কথা হয়েছে মোদী ও হামিদের। সূত্রের খবর, নেপাল ও ভুটান থেকে যাতে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ পৌঁছতে পারে, সে জন্য মোদীর সাহায্য চেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, আগামী বছর থেকে ভারত থেকেও আরও বেশি বিদ্যুৎ পেতে পারে বাংলাদেশ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হামিদের আলোচনাটিও ইতিবাচক হয়েছে বলে কূটনেতিক সূত্রে খবর। মুখ্যমন্ত্রী আজ নৈশভোজে যাওয়ার আগে বলেছেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক। সে দেশের মানুষ আমাকে খুবই ভালবাসেন। রাষ্ট্রপতি আমাকে দেখে খুশিই হবেন, কারণ আমাদের দু’জনের মাতৃভাষাই এক!” সূত্রের খবর, মমতা হামিদকে জানিয়েছেন যে উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে ভারত। স্থলসীমান্ত চুক্তিটি নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, ছিটমহলবাসীদের অবস্থার উন্নতি চান তিনিও। ছিটমহল বিনিময়ের পরে বাসিন্দারা যাতে যথাযথ পুনর্বাসন পান, তার জন্য তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করছেন।