দামের আগুনে এ বার আর হাত পোড়াতে রাজি নয় এনডিএ-সরকার। তাই চাল-আলু-পেঁয়াজের দর সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে সামান্যতম ঝুঁকি না-নিয়ে গোড়াতেই কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন নরেন্দ্র মোদীর বিশ্বস্ত সেনাপতি অরুণ জেটলি। সোমবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথাচাড়া দেওয়ার পরের দিনই (মঙ্গলবার) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক ডাকলেন তিনি। রীতিমতো কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন কালোবাজারির বিরুদ্ধে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতে তার অবৈধ মজুতদারি রোখার জন্য রাজ্যগুলিকে যেমন ব্যবস্থা নিতে বললেন, তেমনই একগুচ্ছ ঘোষণা করলেন কেন্দ্রের তরফ থেকেও।
পেঁয়াজের আগুন দাম এর আগে রাজনৈতিক সঙ্কটে ফেলে দিয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারকে। এই একই কারণে দিল্লির (রাজ্য) মসনদ থেকেও ছিটকে গিয়েছিল বিজেপি। এমনকী এই একই সমস্যা শেষের দিকে বিস্তর ভুগিয়েছে ইউপিএ সরকারকেও। এ বার তাই বিপুল প্রত্যাশা কাঁধে নিয়ে আসা মোদী-সরকার গোড়া থেকেই এ নিয়ে সতর্ক। আর সেই কারণেই সরকারি পরিসংখ্যানে চাল-আলু-পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মাথা তুলতেই এ দিন সন্ধ্যায় নর্থ ব্লকে বিশেষ বৈঠক ডাকেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী রাধা মোহন সিংহ, খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান, বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন প্রমুখ। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রও।
আলোচনা শেষে জেটলি জানান, মূলত চার-পাঁচটি পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু মোট ২২টি পণ্যের দামের উপর কড়া নজর রাখবে কেন্দ্র। ইঙ্গিত স্পষ্ট, চাহিদা-জোগানের স্বাভাবিক পার্থক্য নয়, মূলত কালোবাজারির জন্যই দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।
আর সেই কারণেই এ দিন আলোচনা শেষে মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত
• সবার আগে কালোবাজারি রোখা জরুরি। যে ভাবে হোক বন্ধ করতে হবে বেআইনি মজুতদারি।
• আলু-পেঁয়াজের রফতানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়া। যেমন, পেঁয়াজ রফতানির জন্য ইতিমধ্যেই প্রতি টনে ৩০০ ডলারের ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ বার আলুর ক্ষেত্রেও একই দাওয়াই প্রয়োগ করা হবে।
• চালের দাম গরিব ও মধ্যবিত্তের নাগালে রাখতে খোলা বাজারে ৫০ লক্ষ টন চাল ছাড়বে কেন্দ্রই। ডাল ও তেলের জোগানে অভাব দেখা দিলেও তা আমদানির জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করবে তারা।
• চাষিদের ফল ও শাকসব্জি সরাসরি খোলা বাজারে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে অনুরোধও করেছে কেন্দ্র।
• অন্যান্য রাজ্যের সামনে উদাহরণ তুলে ধরতে দিল্লিতে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র। দিল্লির উপরাজ্যপাল নজিব জংকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, খোলা বাজার থেকে আলু-পেঁয়াজ কিনে তা কম দামে বাজারে বিক্রি করুক দিল্লি সরকার। কৃষি পণ্য বিপণন আইনের আওতাধীন সমস্ত খাদ্যপণ্যও খোলা বাজারে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
আসলে এ বছর বৃষ্টি তেমন ভাল হবে না বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ফলে তখন জোগানে ঘাটতির ফয়দা তুলতে এখন থেকে কালোবাজারিরা আলু-পেঁয়াজ ও অন্যান্য খাদ্যশস্য মজুত করতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ অনেকের। যে কারণে এ দিন রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের নির্দেশ, সব রকম বেআইনি মজুতদারি, ফাটকাবাজি, কালোবাজারি রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিক তারা।
উল্লেখ্য, গতকাল প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ফের ৬% ছাড়িয়েছে। গত পাঁচ মাসে যা সর্বোচ্চ। আর তার প্রধান কারণ শাক-সব্জি, ফল ও খাদ্যশস্যের চড়া দাম। বাজারে ধাপে ধাপে পেঁয়াজ থেকে শুরু করে শাক-সব্জি, ফল ও খাদ্যশস্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলেও ইঙ্গিত মিলছিল। দিল্লির বাজারে দু’সপ্তাহ আগেও যে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ১৫-২০ টাকা, এখন তা গিয়ে পৌঁছেছে ২৫-৩০ টাকাতে। ইউপিএ-জমানায় মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ব্যর্থতা নিয়ে বরাবর সরব থাকা বিজেপি তাই এ নিয়ে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চায় না। অস্ত্র তুলে দিতে চায় না কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের হাতে। যে কারণে এ দিন বিশেষ বৈঠক ডেকে সেই সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চেয়েছেন জেটলি।