৩০৯ ধারা বিলোপ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়া মাত্রই ইম্ফলে খুশির হাওয়া। মণিপুর-কন্যা ইরম শর্মিলা চানুর ‘বন্দি’দশা এ বার ঘুচতে পারে বলেই আশা করছেন মণিপুরবাসী।
রাজ্য থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৪ বছর ধরে অনশন করছেন শর্মিলা। এ বছরই ২০ অগস্ট আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু সেই মুক্তির মেয়াদ ছিল সাকুল্যে ৪০ ঘণ্টা। ৩০৯ ধারাতেই পুলিশ ফের তাঁকে গ্রেফতার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই ধারাতেই এত বছর হাসপাতালের জেল হেফাজতে ‘বন্দি’ চানু।
কেন্দ্রীয় আইন কমিশনের সুপারিশ মেনে ও রাজ্যগুলির মত নিয়ে ৩০৯ ধারা বিলোপ করার বিল আনতে চলেছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে আত্মহননের চেষ্টার ‘অপরাধে’ আর কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই দাবিতে আন্দোলন করছে। এবং তারা দৃষ্টান্ত হিসেবে শর্মিলার কথাও তুলে ধরেছে বারবার। ৩০৯ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তাই উচ্ছ্বসিত চানুর পরিবার, সমর্থকরা। এ দিন থেকেই ইম্ফলে জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের কাছে ‘শর্মিলা কানবা লুপ’ সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) বিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করছে। চানুর ভাই সিংগজিৎ বলেন, “আশা করি এ বার চানু মুক্তি পাবে। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের আন্দোলন নতুন উদ্যমে শুরুর সময় এসেছে।” মানবাধিকার কর্মী বাবলু লোইতংবাম বলেন, “চানুকে আর আটকে রাখা যাবে না। ১৫ বা ১৬ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে পেশ করা হবে। সে দিনই হয়তো নেত্রী মুক্তি পাবেন।”
প্রশ্ন উঠছে, চানু বা তাঁর মতো যে রাজনৈতিক আন্দোলনকারীরা অনশনে বসেন, তাঁদের কি তবে আর গ্রেফতার করতে পারবে না সরকার? ৩০৯ ধারা বিলোপ কি তবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অনশনকে নতুন অক্সিজেন দেবে? আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মতে, বিষয়টা এত সরল নয়। তাঁর বক্তব্য ৩০৯ ধারা বিলোপের অর্থ হল, সরকার অনশনকারীদের বিরুদ্ধে আর ৩০৯ ধারা প্রয়োগ করতে পারবে না। সরকার তখন অন্য আইনের সাহায্য নেবে। প্রয়োজনে সে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার দায়ে অনশনকারীকে গ্রেফতার করতে পারে। একই ভাবে, আত্মহনন অপরাধ নয় বলা মানে আত্মহননে উৎসাহ দেওয়া নয়। সুতরাং অনশনকারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বলপূর্বক খাবার খাওয়াতেও আইনত কোনও বাধা থাকছে না। অনেকটা এই কথাই বলেছেন মণিপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখংবাম-ও। চানুকে মুক্তি দিতে রাজ্য সরকারের নীতিগত আপত্তি নেই বলে জানিয়েই তাঁর বক্তব্য, “অনশন চালিয়ে গেলে তাঁর (চানু) প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে। তা হতে দেওয়া যায় না।’’ সরকারি সূত্রের খবর, ৩০৯ ধারা প্রত্যাহার হলে অন্য উপায়ে চানুকে গ্রেফতার করে হাসপাতালে রাখা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাজ্যের আইন বিভাগ। আইনজীবীদের মতে, পরের শুনানিতে চানু মুক্তি না-ও পেতে পারেন। সম্ভবত বর্তমান মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চানুকে বন্দি রাখার আর্জি জানাবেন সরকারি উকিল। শর্মিলার হাসপাতালের জেল হেফাজতে থাকার সময়সীমা আগামী বছর ২২ অগস্ট পর্যন্ত।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আত্মহননকে কী ভাবে দেখা হবে, সেই যুক্তিতেই কিছু রাজ্য ৩০৯ ধারা বিলোপের বিরোধিতাও করেছে। বিহার বা সিকিম বলেছে, আত্মঘাতী জঙ্গি বা রাজনৈতিক দাবিতে প্রকাশ্যে আত্মাহুতির ক্ষেত্রে কী করণীয়, ভাবা দরকার। মধ্যপ্রদেশ মনে করে, ৩০৯ ধারা বাতিল হলে আত্মহত্যায় সাহায্য বা প্ররোচনার (৩০৬ ধারা) আইনটিও লঘু হবে। আইনজ্ঞদের বড় অংশ বলছেন, ৩০৯ ধারা বিলোপ হলেও যাতে এই সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে।