পুলিশের চরবৃত্তির দায়ে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়া হয়েছে গারো পাহাড়ের ওই মহিলাকে দেশ জুড়ে নিন্দার মুখে পড়ে এমনই জানাল মেঘালয়ের জঙ্গি সংগঠন জিএনএলএ। একটি বিবৃতিতে জঙ্গিদের দাবি, তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জঙ্গিদের একটি ‘ঘোষণাপত্র’ উদ্ধার করেছে। তাতেও একই কথা লেখা। তবে, নিহত মহিলার পরিজন এবং গ্রামবাসীরা জিএনএলএ-র বক্তব্য মানতে নারাজ।
মঙ্গলবার সন্ধের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ সকাল থেকে দক্ষিণ গারো হিল জেলার প্রত্যন্ত দুরামা জঙ্গলে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে লুকিয়ে থাকা ৪০-৫০ জন গারো জঙ্গির সঙ্গে জওয়ানদের গুলি বিনিময় হয়। রাজ্য পুলিশের ‘সুইফ্ট উইপনস্ অ্যান্ড ট্যাকটিক’ (সোয়াট) বাহিনীর সঙ্গে অভিযানে ছিলেন সিআরপি-র ‘কোবরা’ জওয়ানরা। দুর্গম এলাকায় সন্ধে পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। পূর্ব গারো হিলের এসপি ডেভিস এন আর মারাক জানান, জঙ্গলের শিবিরে জিএনএলএ-র পাশাপাশি আলফা জঙ্গিরাও ছিল। ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। হতাহতের খবর নেই। ওই ঘাঁটি থেকে একটি এয়ারগান, তিনটি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট মিলেছে। জঙ্গি হানার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন চোকপটে কার্ফু জারি করে।
জিএনএলএ-র রাজনৈতিক সচিব বিকদট নিকজাং মারাক বিবৃতি দিয়ে জানান, মহিলা পুলিশের চর ছিলেন। তাঁর কাছে খবর পেয়ে পুলিশ সম্প্রতি সংগঠনের প্রশিক্ষক ক্রামকে খুন করে। তাই কম্যান্ডারের নেতৃত্বে তৈরি বিশেষ দলের উপরে তাঁকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে মহিলা পালাতে সক্ষম হলেও, বাড়ি ফিরলে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিরা হুমকি দিয়েছে, ঘটনার ‘বিকৃত’ প্রতিবেদন পেশ করা হলে শাস্তি পাবেন সাংবাদিকরাও।
গারো পাহাড়ে পুলিশের চর অভিযোগে প্রায়ই খুনের ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দল ছেড়ে দেওয়া জঙ্গি বা তাঁদের আত্মীয়রা গুলির নিশানা হন। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে মূলত মহিলাদের বিরুদ্ধেই।
গত রাতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। পরে জানান, জিএনএলএ-র কম্যান্ডার জাংজাং এবং জঙ্গি নেতা টেংটনের নেতৃত্বে ৫ জঙ্গি হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সে রাজ্যে অতিরিক্ত ১০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী পাঠাচ্ছে। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, জঙ্গিরা দ্রুত নিঃশর্ত শান্তি বৈঠকে না-বসলে সরকার চরম পথ নেবে। তবে, মুখ্যমন্ত্রী এখনই গারো পাহাড়ে সেনা অভিযানের সম্ভাবনা খারিজ করেছেন। নিহত মহিলার পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
মন্ত্রিসভার সঙ্গে জঙ্গি যোগসাজসের অভিযোগ নিয়ে মুকুল বলেন, “তদন্ত হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।” রাজ্য মন্ত্রিসভার মহিলা সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোশন ওয়ারজিরি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দেবোরা মারাক ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী আমপারিন লিংডো ঘটনার নিন্দা করে দোষীদের শাস্তির দাবি করেন। আজ রোশন উচ্চপর্যায়ের তদন্তকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। মহিলা খুনে জিএনএলএ-র বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে ‘ইউনাইটেড আচিক রেভেলিউশনারি আর্মি’, ‘লিবারেশন অব আচিক এলিট ফোর্স’।