গোধরা নিয়ে বিঁধে চুরাশির চাপে রাহুল

লোকসভার ভোট বিতর্ক যাতে মেরুকরণের আবর্তে ঢুকে না পড়ে,! সে জন্য এমনিতেই গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা চাইছিলেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু নিজেদেরই শিখ দাঙ্গা নিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে কে ভেবেছিল?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:২৩
Share:

লোকসভার ভোট বিতর্ক যাতে মেরুকরণের আবর্তে ঢুকে না পড়ে,! সে জন্য এমনিতেই গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা চাইছিলেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু নিজেদেরই শিখ দাঙ্গা নিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে কে ভেবেছিল? রাহুল গাঁধীর একটি সাক্ষাৎকার সেই অবস্থাই তৈরি করেছে। কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, গোধরার চেয়ে ১৯৮৪-র ঘটনাই এখন রাজনীতির আলোচনায় হঠাৎ বড় হয়ে উঠেছে। দাঙ্গা নিয়ে রাজনীতিতে বিজেপি-র কৌশলের কাছে পিছিয়ে পড়ছে কংগ্রেস! এই অবস্থায় রাহুলের মাধ্যমেই ক্ষত নিরাময়ের পাল্টা কৌশল ভাবতে বসেছেন কংগ্রেসের নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, একটি সাক্ষাৎকারের ক্ষতি সামলাতে আরও সাক্ষাৎকার দেবেন রাহুল।

Advertisement

দু’দিন আগে এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল গুজরাতে হিংসার ঘটনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বেঁধেন। তারই সূত্রে ’৮৪-র শিখ দাঙ্গায় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। নেহাতই নড়বড়ে জবাব দেন কংগ্রেস সহসভাপতি। ওই ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত কিনা প্রশ্ন করা হলে রাহুল বলেন, “দাঙ্গার সময় আমি ছোট ছিলাম।”

রাহুলের ওই নড়বড়ে জবাবটাই এখন কৌশলে লুফে নিয়েছেন বিরোধী নেতারা। এক দিকে বিজেপি ও অকালি দল দাবি তুলেছে, রাহুলকে শিখ দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবার আজ উপরাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করে দাবি করেছেন, শিখ দাঙ্গার তদন্তে বিশেষ তদন্ত ট্রাইব্যুনাল (সিট) গড়তে হবে। আপ নেতৃত্ব জানান, তাঁরা শীঘ্রই মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে অরবিন্দের এই দাবিতে সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি। শুধু তা-ই নয়, কাল অকালি দলের দিল্লি শাখা এবং শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সমর্থকরা রাহুলের বাড়ির সামনে ধর্না দেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।

Advertisement

বিজেপি নেতারা এতে বেজায় আহ্লাদিত। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, লোকসভা ভোটে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বেশি আলোচনা হোক তা বিজেপি-ও চায় না। কারণ, সেই বিতর্কে মোদীর সুশাসনের বার্তা হাইজ্যাক হয়ে যেতে পারে। তাই বিজেপি এখন কৌশলে শিখ দাঙ্গা নিয়ে এমন ভাবে সুর চড়াতে চাইছে, যাতে গুজরাতে হিংসার ঘটনা নিয়ে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস।

কংগ্রেস এর মোকাবিলা করছে কী ভাবে? কেজরিওয়াল সিট গঠনের দাবি জানানোর পরে আজ কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, শিখ দাঙ্গা নিয়ে যে কোনও সঙ্গত ও আইনি তদন্তকে দল স্বাগত জানাচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “শিখ দাঙ্গার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৪২ জন শাস্তি পেয়েছেন। আরও কয়েক জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে আদালতে। কংগ্রেস চাইছে, শাস্তি হোক অপরাধীদের।”

তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, রাহুলের ত্রুটির কারণেই নতুন করে শিখ দাঙ্গা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে কংগ্রেস। সেই সঙ্গে অবশ্য এ-ও তাঁরা জানিয়েছেন, রাহুলের মাধ্যমেই সেই ক্ষত পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। শীঘ্রই রাহুল ইংরেজি ও হিন্দি-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেবেন। তাতে তিনি এটাই জানাবেন যে, শিখ দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ১৬ বছর আগেই দলের তরফে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁদের ক্ষমা চাওয়া মানে কংগ্রেসের সকলেরই ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। এমনকী, তিনিও ফের ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। তার সঙ্গেই রাহুল প্রশ্ন তুলবেন, গুজরাত দাঙ্গার জন্য বিজেপি কি কখনও ক্ষমা চেয়েছে? মোদী কি ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত? তুলে ধরবেন গোধরা দাঙ্গার পরে মোদীর সরকার সম্পর্কে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির মন্তব্যও।

রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, এটা ঠিকই যে দাঙ্গা প্রসঙ্গে বিতর্কে এখন পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু এর মেয়াদ মাত্র দু’দিন। রাহুল ফের মুখ খুললে, এই বিতর্ক থেমে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement