নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত মডেলকে আক্রমণ জারি রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন দুয়েক আগেই সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, গুজরাত নয়, দেশের জন্য বাংলা মডেলই উপযুক্ত। আজ দিল্লির রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়েও একই কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। আর সে কথা বলতে গিয়ে তুলে আনলেন কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গও।
কোন যুক্তিতে নিজের রাজ্যকে এগিয়ে রাখছেন মমতা? প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেছেন নিজের রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা কেন্দ্রীয় ঋণের কথা। তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, গত দু’বছরে কেন্দ্রীয় ঋণের সুদ-আসল বাবদ তাঁকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা মেটাতে হয়েছে। এর পরেই তাঁর বক্তব্য, তা সত্ত্বেও একের পর এক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মমতার প্রশ্ন, “ওই পরিমাণ কেন্দ্রীয় ঋণ মেটানোর পর গুজরাত কি পশ্চিমবঙ্গের মতো উন্নয়ন করতে পারত?”
উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রগুলির মান নির্ণয়ের প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, “গোটা দেশে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর জাতীয় গড় ৪৪। সেখানে গুজরাতে ৪১। আর পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যা ৩২।” স্কুলছুটের উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, “মহারাষ্ট্রে যেখানে প্রাথমিকে স্কুলছুট ১.৭ শতাংশ, সেখানে গুজরাতে তা ২.১ শতাংশ।” এর পরে টেনে আনেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন। তাঁর দাবি, সংখ্যালঘু উন্নয়নের প্রশ্নেও অন্যান্য রাজ্যকে পিছনে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ। তারা সাচার কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবায়িত করে ফেলেছে। সব শেষে আর্থিক বৃদ্ধির হার। মমতা জানান, গোটা দেশে যখন আর্থিক বৃদ্ধির হার ৪.৯ শতাংশ, তখন রাজ্যের ক্ষেত্রে তা ৭.৭২ শতাংশ।
মমতার মতে, “উন্নয়ন করতে গেলে দূরদৃষ্টির প্রয়োজন, যা রাজ্য সরকারের রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আজ তাই লোডশেডিং নেই। আমরা বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক গড়েছি। ভবিষ্যতে তা রফতানিও করতে পারব। বিনামূল্যে জল, দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের বিশেষ আর্থিক সাহায্য, কিশোরীদের পড়াশোনার জন্য সাইকেল ও আর্থিক ভাতা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।”
মমতার বক্তব্য, এ সবই বাস্তব। আর তার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মোদী সরকার শুধু নিজের ঢাক পেটাতেই ব্যস্ত।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী তাঁর নিজের রাজ্যের উন্নয়নের ছবিকে বিপণন করে ভোট-যুদ্ধে নেমেছেন। কিন্তু আজ নিজের বক্তৃতায় সরাসরি মোদীর সেই তত্ত্বকে আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, তা বাস্তবে কতটা ভিত্তিহীন। একই সঙ্গে দাবি করেছেন, “গুজরাত নয়। দেশের সামনে প্রকৃত মডেল হল পশ্চিমবঙ্গ।” এবং জানিয়েছেন, বাংলার সেই সাফল্যকে দেশের সামনে সাধ্যমতো তুলে ধরতেই সারা দেশের বিভিন্ন আসনে লড়বে তাঁর দল।
লোকসভা ভোটের আগে মোদী-সহ শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্ব মমতার প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে চলার পক্ষপাতী। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ এখনও মনে করেন, ভোটের পরে সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে মমতার সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। মমতা অবশ্য বারবারই বলে আসছেন, ‘প্রি-প্রেড’ নয়, রাজনৈতিক সমীকরণ যা হওয়ার সবই হবে ‘পোস্ট পেড’। আজ দিল্লির বুকে দাঁড়িয়েও তিনি যথারীতি বিজেপি ও কংগ্রেস দু’পক্ষেরই কঠোর সমালোচনা করেন। জানান, এদের মধ্যে আঁতাঁত রয়েছে। আর তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মতি না নিয়ে কার্যত সিন্ডিকেট
করে সংসদে তেলঙ্গানা বিল পাশ করিয়ে নেয় দু’দল। মমতার কথায়, “তাই আমি ফেডেরাল ফ্রন্টের পক্ষে। যাতে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কাছে আরও গুরুত্ব পায়।”
আজ বিজেপিকে যেমন সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন মমতা, তেমনই কংগ্রেসকে দুর্নীতিগ্রস্ত অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “আঞ্চলিক দলগুলিকে সিবিআই, আয়কর দফতরের জুজু দেখিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে দু’দলই।” মমতার বক্তব্য, “আজ রামলীলা আসার পথে অনেকের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। তাঁদের বলি, আপনারাও এগিয়ে আসুন। সকলে একসঙ্গে পরিবর্তন আনি। কংগ্রেস ও বিজেপির পরিবর্তে এক বিকল্প সরকার গড়ি।”