সে দিন ভাগ্যিস ডিসকভারি চ্যানেল খুলে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী! নইলে আরও কত গাছের প্রাণ যেত!
মজা নয়। ব্যাপারটা সিরিয়াস। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীই আজ খোলসা করলেন। মোদী তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। এক দিন বাড়ি ফিরে ‘চ্যানেল সার্ফ’ করতে করতেই নাকি ডিসকভারিতে আটকে গিয়েছিল তাঁর চোখ। দেখলেন, কানাডায় সড়ক নির্মাণের জন্য পথের সামনে এসে পড়া গাছ কেটে ফেলা হয় না। যন্ত্রের সাহায্যে গোড়া থেকে সেটি উপড়ে ফেলা হয়। তার পর প্রতিস্থাপন করা হয় অন্যত্র।
কানাডা থেকে সেই যন্ত্র গুজরাতে এসেছে কয়েক মাস হল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ বার গডকড়ীকে ডেকে মোদী জানিয়েছেন, গোটা দেশে চালু করা হোক এই ব্যবস্থা।
আজ সেই প্রকল্প আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করতে গিয়েই নেপথ্য কাহিনিটা শোনালেন গডকড়ী। জানালেন, গোটা দেশে জাতীয় সড়ক নির্মাণ ও তার সম্প্রসারণের জন্য আর গাছ কাটা হবে না। চার মাস পর থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। কানাডার সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর মন্ত্রক যোগাযোগ করেছে। সরকারি খাতায় নথিভুক্ত ঠিকাদারদেরও জানিয়েছে বিষয়টি। সরকার নয়া ‘স্কিম’ও আনছে। বিদেশ থেকে কেউ সেই যন্ত্র কিনে আনলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাঁকে গাছ তোলা ও প্রতিস্থাপনের ঠিকা দেবে মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রীর এই ঘোষণায় রাজ্যের জন্য কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কারণ, বারাসত থেকে বনগাঁ-পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেনে রূপান্তরিত করার প্রকল্পে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক আগেই অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু ওই সড়কের (পুরনো যশোহর রোড) দু’পাশে অসংখ্য গাছ থাকায় রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করা যাবে না বলে মন্ত্রকের কর্তাদের এক রকম জানিয়েই দিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, রাস্তা চওড়া হওয়ার কথা চাউর হতে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিবেশ রক্ষার কথা বলে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমে পড়েছে। ফলে কয়েক হাজার গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ যে সম্ভব নয়, তা মন্ত্রকের কর্তারাও বুঝে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র যদি বিদেশি যন্ত্র এনে যশোহর রোডের দু’পাশের গাছগুলি অন্যত্র সরায়, তা হলে বাংলাদেশগামী এই সড়কের সম্প্রসারণ সম্ভব। তবে ওই কর্তা এ-ও জানান, যশোহর রোডের আশপাশের অনেক জমিই জবরদখল হয়ে রয়েছে। ফলে ১০০-১৫০ বছরের পুরনো গাছগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরেও জবরদখলমুক্ত করার কাজটা রাজ্যকে করতে হবে। বাস্তবে ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়ার কাজ কবে শুরু করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের প্রধান সড়ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন গডকড়ী। এক সময় নিতিন ছিলেন মহারাষ্ট্রের পূর্তমন্ত্রী। ঘনিষ্ঠরা বলেন, রাস্তা নির্মাণের কাজ আবেগ দিয়ে করেন তিনি। এমনও হতো যে, মন্ত্রী নিজে উড়ালপুল নির্মাণের কাজ তদারক করছেন। গডকড়ীর কথায়, “দেশের পরিকাঠামো উন্নয়ন আমার স্বপ্ন।” এ বার হয়তো বুঝেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আবেগটাও কম নয়।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বটা নিতিনও তাই যেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে দৃশ্যত ‘ডু ইট নাও’ যজ্ঞে নেমেছে মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ জমানায় সড়ক নির্মাণের কাজ নিয়ে খোদ মনমোহনই অখুশি ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি কমল নাথকে মন্ত্রকের দায়িত্ব দেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে কমলনাথ জানিয়েছিলেন, দিনে অন্তত গড়ে ৯ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক নির্মাণ করবে সরকার। অথচ নিতিন আজ জানান, এখন প্রতি দিন গড়ে মাত্র ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়। কিন্তু তিনি দু’বছরের মধ্যে দৈনিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা বানিয়ে দেখাবেন।
গডকড়ী জানান, গত দু’দিনের বৈঠকের পর তিনি বুঝেছেন, “মূলত দু’টি কারণে জাতীয় সড়ক নির্মাণ থমকে। একটি জমি অধিগ্রহণ, অন্যটি পরিবেশের ছাড়পত্র এবং সেই সংক্রান্ত আইনি জটিলতা। এমনকী এক জায়গায় কিছু বাঁদর ‘ঘরছাড়া’ হবে বলে দু’হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বিশ বাঁও জলে।” গত দু’দিনে প্রকল্প ধরে ধরে জটিলতা কাটানোর পথ খোঁজা হয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “আইন-আদালত হাজার জটিলতা আমি বুঝি না। শুধু কাজটা বুঝি।”