শপথের দিনই ধাক্কা। বড় রেল দুর্ঘটনা উত্তরপ্রদেশে।
সরকারের এক মাসের মাথায় ফের রেল দুর্ঘটনা। এ বার বিহারে।
আর এই এক মাসের মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন গোপীনাথ মুন্ডে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে কাটতেই পর দিন ফের সড়ক দুর্ঘটনা। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের গাড়ির কনভয়ে। পর দিন আবার
উমা ভারতীর গাড়িতে। শুক্রবার আবার অন্ধ্রপ্রদেশে পাইপলাইনে বিস্ফোরণ।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক মাস হতে না হতেই একের পর এক দুর্ঘটনার ঘনঘটা। এ কি কোনও গ্রহের ফের? না কি কোনও অশুভ সঙ্কেত? কারও কি তবে ‘কু-নজর’ পড়ল নতুন সরকারের উপর?
এখন এমনই সাত-পাঁচ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিজেপি নেতাদের। তাই সরাসরি উপরওয়ালার শরণে দল। উপাসনা পরমেশ্বরের। সরকারের উপর ‘কু-নজর’ থেকে মুক্তির জন্য দিল্লির বিভিন্ন মন্দিরের পূজারী, মসজিদের মৌলবী, গুরুদ্বারের গ্রন্থী, গির্জার পাদরি। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে দল এর মধ্যে থাকতে চাইছে না। পাছে আবার নতুন বিতর্ক শুরু হয়, সে কথা ভেবে দলের কোনও নেতাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রকাশ্যে নেতা-কর্মীরা বলতে চাইছেন না সরকারের উপর কালো মেঘের ছায়া হটাতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু বিজেপি সূত্র বলছে, সরকারের সঙ্কট দূর করার জন্যই এই আয়োজন। ধর্মীয় গুরুদের দিয়ে উপাসনার পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে জনসাধারণকে। এই সমারোহের আয়োজন বিজেপির গঙ্গা প্রকোষ্ঠের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক বীরেন্দ্র জুয়ালের উদ্যোগে হচ্ছে। প্রকাশ্যে তিনি দাবি করছেন, ‘কর্মযোগী’ নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানাতে সকলকে একত্রিত করা হচ্ছে মাত্র।
মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, “শপথের দিনই যখন রেল দুর্ঘটনা ঘটল, সে দিনই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি, এ সব মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। আবার নিয়তি এমনই যে ঠিক এক মাসের মাথায় ফের দুর্ঘটনা। এই সময়ের ভিতরেই গোপীনাথ মুন্ডের মতো নেতাকে হারালাম।” এর পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীটির মন্তব্য, “প্রথম এক মাসের অভিজ্ঞতা আদৌ সুখকর নয়। আমরা যাঁরা একটু-আধটু ধম্মে-কম্মে বিশ্বাস করি, তাঁদের জন্য তো আরও নয়। প্রথম এক মাসে সরকারের ঝঞ্ঝাট নেহাত কম নয়, তার উপরেই ঘটে চলেছে একের পর এক দুর্ঘটনা!”
ক্ষমতায় বসার সময় থেকেই নরেন্দ্র মোদী আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, যাতে তাঁর সরকারের কাজকর্ম ঘিরে কোনও বিতর্ক না হয়। তা সত্ত্বেও কখনও স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা, কখনও বা মন্ত্রী নিহাল চন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, আবার এর ভিতরেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম নিয়ে নানান প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। রেল ভাড়া বৃদ্ধি, রেল দুর্ঘটনা, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার মতো ঘটনাতেও সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। খোদ মোদীই সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে ব্লগে লিখেছেন, এমন অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যাতে সরকারের কোনও ভূমিকাই নেই। ইউপিএ সরকার অন্তত একশো দিন এই সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পেলেও তাঁর সরকার সেটি পাচ্ছে না। ভোটের প্রচারের সময়ে সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আসেনি বলে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে আদালতে। এখন এই যাবতীয় ঝঞ্ঝাট-মুক্তিরই পথ খুঁজছে দল।