বরাক উপত্যকাকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছে ‘ইউনাইটেড টেরিটরি ডিমান্ড কমিটি’ (ইউটিডিসি)। এ বার দাবি আদায়ে চাপ তৈরির জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করা হল। নাম ‘বরাক ভূমি গণতান্ত্রিক দল’। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উপত্যকার সব আসনে তাঁরা লড়বেন বলে নতুন দলের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন। আজ শিলচরের চার্চ রোডে দলীয় অফিসের উদ্বোধন করা হয়।
ইউটিডিসি-র সভাপতি পরিতোষ পালচৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারিছ আলি মজুমদার জানান, এই বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁরা শিলচরে নাগরিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সবাই তখন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব দেন। সে থেকেই প্রক্রিয়া শুরু। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী মাসে দিল্লিতে রেজিস্ট্রেশন-সহ অন্য কাজ করা হবে। দিল্লিতে থাকাকালীন তাঁরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সাংসদদের দৃষ্টি আকর্ষণে ধর্না দেবেন।
পরিতোষবাবুর কথায়, ‘‘ইউটিডিসি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাবে। রাজনৈতিক পথে এগোবে বরাক ভূমি গণতান্ত্রিক দল।’’ তিনি জানান, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা বরাক উপত্যকার ১৫ আসনে প্রার্থী দেবেন। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম বার লড়েই তাঁরা সাড়া ফেলবেন বলে দাবি করে পরিতোষবাবু বলেন, ‘‘বরাকের প্রায় প্রতিটি মানুষ অসম থেকে পৃথক হতে চান। কিন্তু উপযুক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব না পেয়ে তাঁরা কংগ্রেস বা বিজেপির মতো দলগুলিকে ভোট দিতে বাধ্য হন।’’
‘বরাক ভূমি গণতান্ত্রিক দল’-এর নেতারা বলেন, ‘‘কারা সংখ্যালঘু, কারা সংখ্যাগুরু— বিজেপি-কংগ্রেসই সে সব হিসেব কষে। বরাক উপত্যকার মানুষের তাতে কিছু আসে যায় না। সব ধর্মের মানুষ এখানে মিলেমিশে রয়েছেন।’’
এনআরসি নিয়েও তাঁরা অভিমত প্রকাশ করেন। নেতারা জানান, মানুষের মধ্যে এ নিয়ে হাজার প্রশ্ন। কিন্তু কেউ কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। দুর্ভোগে পড়েছেন বিরাট সংখ্যার মানুষ। তাঁদের জন্য নবগঠিত রাজনৈতিক দলটির একটাই সমাধান— পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। পরিতোষবাবু বলেন, ‘‘এখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জির নামে অসম নাগরিক পঞ্জি তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে বরাক জুড়ে পথসভা করা হবে।’’
‘বরাক ভূমি গণতান্ত্রিক দল’-এর আশঙ্কা, এনআরসি তৈরির জন্য এমন জটিল নির্দেশিকা তৈরির দুরভিসন্ধি রয়েছে। অসমকে উপজাতি রাজ্য ঘোষণা করার চক্রান্ত চলছে। তাতে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বঙ্গভাষীরা। তাই আগেভাগে অসম থেকে বেরনোর পথ খুঁজে বের করতে তাঁরা আহ্বান জানান। বর্তমান এনআরসি প্রক্রিয়াকে বরাক উপত্যকার জন্য অপ্রয়োজনীয় বলেই মন্তব্য করেন নতুন দলের নেতারা। যুক্তি দেখান, অসম থেকে পৃথক বলে এই নাগরিক পঞ্জিতে কাজ হবে না। ফলে নতুন করে নাগরিক পঞ্জি তৈরি করতেই হবে। তাই তাঁরা নতুন রাজনৈতিক দলের শক্তি বাড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।