কাকে খুশি করলেন জেটলি, মিলছে না উত্তর

সকলকে খুশি করতে গেলে কাউকেই খুশি করা যায় না। অরুণ জেটলির বাজেটে তা আরও এক বার প্রমাণিত হল। শিল্পমহলকে বিনিয়োগের পথে টেনে আনতে বাজেটে উৎসাহভাতার প্রস্তাব নেই। শিল্পমহল এতে অখুশি। অখুশি মধবিত্তও। তাদের জন্য আয়করে নতুন কোনও ছাড় দেননি জেটলি। উল্টে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিষেবা কর বাড়ানোর ফলে খরচ বাড়ার আশঙ্কা। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় সংস্থাগুলি যাতে পাল্লা দিতে পারে, সে জন্য কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে কর ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২
Share:

সকলকে খুশি করতে গেলে কাউকেই খুশি করা যায় না। অরুণ জেটলির বাজেটে তা আরও এক বার প্রমাণিত হল।

Advertisement

শিল্পমহলকে বিনিয়োগের পথে টেনে আনতে বাজেটে উৎসাহভাতার প্রস্তাব নেই। শিল্পমহল এতে অখুশি। অখুশি মধবিত্তও। তাদের জন্য আয়করে নতুন কোনও ছাড় দেননি জেটলি। উল্টে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিষেবা কর বাড়ানোর ফলে খরচ বাড়ার আশঙ্কা। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় সংস্থাগুলি যাতে পাল্লা দিতে পারে, সে জন্য কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে কর ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হবে না বলেই মনে করছে শিল্পমহল। মধ্যবিত্তকে না দিয়ে কর্পোরেট সংস্থাকে কর ছাড় দেওয়ায় বিরোধীরা এই বাজেটকে কর্পোরেটের বাজেট বলে সমালোচনা করছেন।

কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলের সমালোচনার জবাব দিতে আজ মাঠে নামেন অর্থ-প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা। তাঁর দাবি, “এই বাজেটে মোটেই শুধু কর্পোরেটের কথা ভাবা হয়নি। মধ্যবিত্ত ও গরিবদের কথাও ভাবা হয়েছে।” শিল্পে নতুন লগ্নির ক্ষেত্রে কর ছাড় না দেওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “দেশের অর্থনীতি মন্দার হাত থেকে বেরিয়ে আসছে। তবে উগান্ডা, কেনিয়া, নেপালের চেয়েও ধীর গতিতে। এই অবস্থায় কর ছাড় চাওয়া যায় না।”

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ফেরাতে বাজেটে কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছে বলেই দাবি করেছেন জয়ন্ত। তাঁর যুক্তি, কর্পোরেট করের হার ৩০ থেকে ২৫ শতাংশে কমিয়ে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করে সরকার কর্পোরেট করের হারকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মানানসই করতে চেয়েছে। অর্থ-প্রতিমন্ত্রীর কথায়, “আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির তুলনায় ভারতে কর্পোরেট করের হার যথেষ্ট বেশি। তাই করের হার কমানো হয়েছে। তবে অন্য যে ছাড় দেওয়া হতো, সেগুলি তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ কর ছাড় দেওয়াটা এগিয়ে চলার রাস্তা নয়।”

এ দেশের শিল্পমহল বা বণিকসভা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যায় না বড় একটা। তাই এ বারও বণিকসভাগুলি সাধুবাদই জানিয়েছে বাজেটকে। যদিও শিল্পপতিরা অনেকেই বলছেন, মোদী সরকার যে বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াই যেত। আশা ছিল, একেবারে ছক ভাঙা কিছু করবেন জেটলি। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। বাজেটে ঠুকঠুক করে সংস্কারের ইনিংসে রান তোলার চেষ্টাই করে গিয়েছেন জেটলি। কিন্তু ছক্কা হাঁকাতে পারেননি।

শিল্পমহল আশা করেছিল, রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরানোর কথা ভুলে অর্থমন্ত্রী শিল্পে উৎসাহ দিতে করছাড় দেবেন। কিন্তু জেটলি হয়তো ভেবেছিলেন সেটা করলে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাগুলি (রেটিং এজেন্সি) ভারতে ঋণ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নেবে। তাই আর্থিক শৃঙ্খলা সামান্য শিথিল করলেও ঘাটতি একেবারে লাগামের বাইরে যেতে দেননি জেটলি। কিন্তু এতেও যে ভারত সম্পর্কে রেটিং এজেন্সিগুলির মূল্যায়ন ভাল হবে, তার কোনও ইঙ্গিত মিলছে না এখনও পর্যন্ত। মুডি’জ সংস্থার অর্থনীতিবিদ অতসী শেঠ বলেন, “এখনও যথেষ্ট বাধা রয়েছে। সরকার আর্থিক শৃঙ্খলার থেকেও বৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের সেই অধিকার রয়েছে।” তাঁর যুক্তি, রাজকোষ ঘাটতির সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মাথায় শোধ না হওয়া ঋণের বোঝা দুশ্চিন্তার কারণ। তাঁর পরামর্শ, মোদী সরকারের এখন উচিত ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৬-র ১ এপ্রিল থেকেই পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করা। নগদ ভর্তুকি হস্তান্তর ব্যবস্থাকেও আরও নিশ্ছিদ্র করে তোলা প্রয়োজন। যাতে অপচয় বন্ধ করে ভর্তুকির বহর কমানো যায়।

জেটলি কাল বাজেট-প্রস্তাবে জানিয়েছেন, কালো টাকা রুখতে নতুন আইন তৈরি ও ফেমা আইন সংশোধন করবে সরকার। এই প্রস্তাব নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল। বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম আজ এ নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এক বিবৃতিতে। তাদের বক্তব্য, নতুন আইন যেন বৈজ্ঞানিক ও যুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি হয়। সব কিছু যেন স্পষ্ট ভাবে, সহজ করে লেখা থাকে আইনে। কর্তারা যেন যে যার মতো ব্যাখ্যা করে নিয়ে নিজের মতো করে আইনের ব্যবহার বা অপপ্রয়োগ করতে না পারেন, সেটা দেখা দরকার। দেখতে হবে বৈধ ব্যবসায়িক লেনদেনের খুঁটিনাটি নিয়ে নাক গলানোর সুযোগ যেন এতে তৈরি না হয়। তা হলে ‘ফেমা’-র সংশোধন সহজেই ফিরিয়ে আনতে পারে তার পূর্বসূরি বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন বা ‘ফেরা’-র নামে এক সময়ে চলা আইনি প্রহসনকে। অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত বিদেশি সম্পত্তি ও বেনামী লেনদেন আইন করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েও বলেছেন, “বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্ক হওয়া দরকার। পরামর্শ নিতে হবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের। সব চেয়ে বড় কথা, ওই আইন যাতে দুর্নীতির নতুন উৎস না হয়ে ওঠে, সেটা নিশ্চিত করাও জরুরি।”

অর্থ প্রতিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা থেকে অ্যাসেচ্যামের সতর্কবার্তা বাজেট পেশের ২৪ ঘণ্টা পরেও এটা স্পষ্ট নয়, কাকে খুশি করলেন জেটলি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement