মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের পরে এই প্রথম মুখোমুখি হলেন উদ্ধব ঠাকরে ও নরেন্দ্র মোদী।
শিবসেনাকে সঙ্গে নেওয়ার রাস্তা রেখে মহারাষ্ট্রে একাই সরকার গড়ে ফেলল বিজেপি। সাত জন মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। শিবসেনাকে সরকারের শরিক করা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও অবশ্য এ দিন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা চেয়েছিলেন মহারাষ্ট্রে নয়া সরকারে শপথের অনুষ্ঠানটি হোক পুরোপুরি বিজেপির। শিবসেনাকে তাঁরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছিলেন যে, মহারাষ্ট্রে বিজেপিই এখন ‘বড় দাদা’। বিজেপির শর্ত মেনেই চলতে হবে শিবসেনাকে। তাই কোনও ভাবেই যাতে শিবসেনার কোনও মন্ত্রী এ দিন শপথ না নেন, সেটা নিশ্চিত করে বিজেপির নেতারা সুচারু ভাবে সেই বার্তাটিই পৌঁছে দিলেন উদ্ধব ঠাকরের দলকে।
বিষয়টিকে দলের মর্যাদার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে উদ্ধবও এ দিনের শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গোড়ায়। বিজেপিকে সমর্থনের থেকে বিরোধী আসনে বসার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু করে দেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বরফ গলানোর কাজটি করেন অমিত শাহ। দুপুর নাগাদ উদ্ধবকে ফোন করে শপথ অনুষ্ঠানে আসতে বলেন। অরুণ জেটলি ও ফডণবীসও ফোন করে একই অনুরোধ করেন। এর পরেই শপথের অনুষ্ঠানে যান সস্ত্রীক উদ্ধব।
শিবসেনা-প্রধান যখন শপথ মঞ্চে পৌঁছন, তখন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ হয়ে গিয়েছে। তবু মহারাষ্ট্রে ফল ঘোষণার পর এই প্রথম নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি হলেন তিনি। মোদীর সঙ্গে হাসিমুখে হাত মেলান উদ্ধব। প্রথম সারিতেই তাঁর বসার ব্যবস্থা করা হয়, তবে মোদীর পরে পাঁচ জনের ব্যবধানে। শপথ-পর্বের শেষে আরও এক বার মোদীর সঙ্গে করমর্দন করেন উদ্ধব। এর পরে মঞ্চের পাশেই কিছু ক্ষণ অমিত শাহের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের বক্তব্য, “শপথ অনুষ্ঠানে আজ উদ্ধব ঠাকরের আসাটা ইতিবাচক ঘটনা। শিবসেনার সঙ্গে আলোচনা সদর্থক দিকেই এগোচ্ছে।” শিবসেনা সূত্রেরও বক্তব্য, অমিত শাহের সঙ্গে উদ্ধবের আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। খুব শীঘ্রই সরকারে সামিল হওয়ার ব্যাপারে কোনও পরিণতি দেখা যাবে। ১১ নভেম্বর বসছে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। তাতে সরকারের গরিষ্ঠতার প্রমাণ দেবেন দেবেন্দ্র। এখন প্রশ্ন হল, তার আগে কি শিবসেনার সঙ্গে রফা হবে বিজেপির? নাকি সরকার গড়ার মতো সেই কাজটিও শিবসেনাকে বাদ রেখেই সেরে ফেলবে বিজেপি? রাজস্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রক ছাড়াও স্পিকারের পদটি চাইছে শিবসেনা। এই অবস্থায় কোনও মন্ত্রক অবশ্য এ দিন বণ্টন করা হয়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বিজেপির যে বিধায়করা এ ক’দিন নিজেদের এগিয়ে রেখেছিলেন, তাঁদের সকলকেই নেওয়া হয়েছে দেবেন্দ্রর মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রী হয়েছেন পঙ্কজা মুন্ডে, একনাথ খড়সে থেকে সুধীর মুঙ্গেতিওয়ার। শিবসেনা প্রসঙ্গে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, “এক বার উদ্ধবদের সঙ্গে কথা পাকা হলে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করতে হবে দেবেন্দ্রকে।”
নতুন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের পাশে স্ত্রী অমৃতা। শুক্রবার মুম্বইয়ে, নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এটাই ছিল বিজেপির কৌশল। এনসিপির নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়ে সরকার চালাতে বিজেপির কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু শিবসেনাকে বুঝতে হবে, মহারাষ্ট্রে এখন বিজেপিই বড় দাদা। সে কারণে নয়া সরকারের শপথে শিবসেনার কোনও মন্ত্রীকে সামিল করা হয়নি। শিবসেনাকে ছাড়াও হচ্ছে না, আবার ধরে রেখে এমন চাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে বিজেপির অধীনেই তারা থাকতে বাধ্য হয়।”
তবে ‘বড় দাদা’ হতে গিয়ে বিজেপি জোট-রাজনীতি থেকে সরে আসতে চাইছে, এমন কোনও বার্তাও দিতে চাইছে না মোদী-অমিত জুটি। আজ কানায় কানায় ভরা মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মোদী ও অমিত শাহের মাঝে লাগানো হয়েছিল লালকৃষ্ণ আডবাণীর বড় কাটআউট। যে আডবাণী বিজেপি-শিবসেনা জোটের পক্ষেই বরাবর সওয়াল করে এসেছেন। খোদ আডবাণীও সপুত্র-কন্যা ছিলেন শপথে। ছিলেন বিজেপি ও শরিক দলের মুখ্যমন্ত্রীরা। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা অকালি দলের নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু যাঁদের অন্যতম। মোদী-জমানায় উপেক্ষিত বিজেপির আর এক প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর জোশীকেও দেখা গিয়েছে মঞ্চে। এর পাশাপাশি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ থেকে শরদ পওয়ারের দলের প্রফুল্ল পটেল, অজিত পওয়ার উপস্থিত ছিলেন মহারাষ্ট্রের অন্যান্য দলের নেতারাও।
ছবি: পিটিআই।