তারিখটা একই। ১২ অক্টোবর!
গত বছর এই তারিখেই ওড়িশার গোপালপুরে আছড়ে পড়েছিল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় পিলিন। আজ, রবিবার একই তারিখে বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামের মাঝামাঝি জায়গায় আছড়ে পড়তে চলেছে আর এক অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ।
শক্তির নিরিখেও অনেকটা মিল রয়েছে পিলিন ও হুদহুদের। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, পিলিনের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার। আর আবহবিদদের ধারণা, ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে চলেছে এ বারের ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। তার জেরে ভারী বৃষ্টি থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে। এর ফলে বাড়ি-ঘর, বিদ্যুৎ, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এ রাজ্য সরাসরি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে না পড়লেও উপকূলে ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বইবে ঝোড়ো হাওয়াও। সেই সঙ্গে বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেও।
গত মঙ্গলবার আন্দামান সাগরে ঘনীভূত হয়ে এই ঘূর্ণিঝড়। ওমানের আবহবিদেরা নাম দেন হুদহুদ। আরব্য উপকথায়, হুদহুদ একটি পাখির নাম। গত তিন দিনে আন্দামান সাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে সরে এসেছে সে। ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়ে শুক্রবার রাতেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেয় সে। এ দিন তার শক্তি আরও বেড়েছে। রাত পর্যন্ত বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, আজ, রবিবার সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যে বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামের মধ্যে প্রবল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়তে চলেছে এই ঝড়। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, উপকূলের কাছে আসায় জলীয় বাষ্প শুষেই শক্তি বাড়ছে তার।
১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন। মারা গিয়েছিলেন দশ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে চাইছেন প্রশাসনিক কর্তারা। ১৯৯৯ সালের পর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রক্রিয়াও অনেক আধুনিক হয়েছে। যার ফলে এখন সতর্কতাও অনেক আগে মেলে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় পিলিনের সময়ও আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েই প্রাণহানি ঠেকানো গিয়েছিল।
এ বারও সেই একই কায়দায় অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা সরকার বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত। সেনা সাহায্যের জন্য কেন্দ্রেরও দ্বারস্থ হয়েছে তারা। সেনা বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রোহন আনন্দ জানিয়েছেন, বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামে আটটি উদ্ধারকারী দল ও চারটি ইঞ্জিনিয়ারের দলকে রাখা হয়েছে। গোপালপুরেও আটটি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, বায়ুসেনা ও নৌসেনাকেও তৈরি রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ দিন হুদহুদ নিয়ে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ। পরে ওড়িশা ও অন্ধ্রের মুখ্যসচিবদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ওই দুই রাজ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ৩৯টি দল পাঠানো হয়েছে। রাজ্যগুলির ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে শনিবার রাতে একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব এবং আবহাওয়া দফতরের অফিসারেরা। উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ বিলি যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, তা নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। হুদহুদের ফলে যে যে রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যাতে যোগাযোগ রাখেন, সে নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী।
পিলিনের সময় ভারী বৃষ্টি হয়েছিল এ রাজ্যে। ছিল ঝোড়ো হাওয়াও। এ বারেও তেমনই পূর্বাভাস রয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, রবিবার মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হবে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। রবিবার কলকাতাতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টি হতে পারে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা, সেচ দফতর-সহ বেশ কয়েকটি দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুমও। দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজ্যের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, চার জেলায় স্পিডবোট ও ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এ রাজ্যের সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের রবিবার সাগরে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।
ঝড়ের আশঙ্কায় হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেন ঘুরপথে চলছে। টেলিকম সংস্থাগুলিও ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের অবস্থা জানতে বিশেষ নম্বরের ব্যবস্থা করেছে। রেলের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রবল ঝড়ে তার ছিঁড়ে ও লাইনে জল জমে রেল পরিষেবা থমকে যেতে পারত। তাই আগাম ঘুরপথে ট্রেন চালানো হচ্ছে।