গুয়াহাটির সভায় বক্তা মমতা। বুধবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
রাহুল গাঁধীর অসম সফর আর অসমে ‘বাইদো’র প্রথম বার জনসভা একই দিনে। অসমিয়া ভাষায় বাইদো মানে দিদি। স্কুল-কলেজে পরীক্ষার মরসুম। প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি দীপেন পাঠক সরুসজাই স্টেডিয়ামের বাইরের মাঠটিই জোগাড় করতে পেরেছিলেন কোনওমতে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে সেই মাঠেও ৩০ হাজারি ভিড় জমে গেল অক্লেশে।
দিদি এলেন ২টো ৪৫ মিনিটে। বিহু নাচনীদের পিছন থেকে প্রথম উঁকি মারল সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি। কাঁধে ফুলাম গামোসা। মানে ফুলকাটা বাহারি গামছা। সঙ্গে মুকুল রায় আর ইন্দ্রনীল সেন। প্রথমে ইন্দ্রনীল সেনের সাঁওতালি ও গোয়ালপাড়িয়া গান। তার পর মমতা বলতে শুরু করলেন অসমিয়ায়। ‘মোর ভাইটি আরু বোনটি’ থেকে শুরু করে ‘অসম আমার রূপহী’ অবধি বলতেই হাততালি। মমতা ফিরলেন নিজের মেজাজে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নানা ভাষা মিশিয়ে চলে গেলেন বক্তৃতার মূল অংশে।
সংযুক্ত সংখ্যালঘু মোর্চার নেতারা আগেই অনুপ্রবেশ, জমির পাট্টার প্রশ্নে দিদির জবাব চেয়ে রেখেছিলেন। জমির দাবিতে আত্মঘাতী প্রণব বড়োর স্মৃতিতে নীরবতা পালনও হয়েছে মঞ্চে। সভার পর কৃষক নেতা অখিল গগৈয়ের সঙ্গে প্রণব বড়োর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছেন মমতা।
রাহুল, মোদী দু’জনেই প্রাথমিক ভাবে জমি বা অনুপ্রবেশের সমস্যা এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মমতার বক্তৃতার মূল লক্ষ্যই ছিল উপজাতি ও সংখ্যালঘুদের ভোট। সোজাসুজি বলে দিলেন, “পাহাড়ের মানুষকে পাহাড়ে, জঙ্গলে বাস করা মানুষকে জঙ্গলের জমিতে পাট্টা দিতেই হবে। আমরা ক্ষমতায় এলে ভূমি অধিগ্রহণ নীতি বদলে দেব। যে যেখানে আছেন, থাকবেন। কেউ জোর করে আপনাদের হঠাতে পারবে না।”
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময় অসমের বহু মানুষ বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে কথা মনে করিয়ে দিদি বলেন, “কংগ্রেস, বিজেপি দুই দলই দাঙ্গায় উস্কানি দেয়। এদের চিনে নিন। আমরা রাজবংশী আকাদেমি গড়েছি, উর্দু আকাদেমি গড়েছি। কামতাপুর ভাষা নিয়ে সমীক্ষা চালাচ্ছি। আমাদের কাছে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ।” তবে পৃথক তেলঙ্গানা গড়ার সিদ্ধান্তকে কংগ্রেসের ভোট-রাজনীতি বলে সমালোচনা করে মমতা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন অসমেও পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর যে আন্দোলন হচ্ছে, তিনি তার পক্ষে নন।
পোডিয়ামটা বেশ উঁচু। মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চ জুড়ে পায়চারি করেই বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মমতা। সেটা দেখে উৎফুল্ল হাততালি পড়ল প্রবল। বাকি বক্তৃতায় কখনও এল বন্যার টান, কখনও এল লতার গান। কখনও নেতাজির অসমপ্রীতি, কখনও হেমন্ত-ভূপেন্দ্রগীতি, কখনও বা রবীন্দ্রনাথ, কখনও মূল্যবৃদ্ধি। বরপেটা থেকে আসা যুবতী রোশেনারা বেগম ‘বাইদো’কে দেখে মুগ্ধ। বললেন, “এত চটপটে, সরল হাসি, সাধারণ পোশাক মনেই হয় না মুখ্যমন্ত্রী।”
রাজ্যে ক’টি আসনে লড়বেন? ‘সিদ্ধান্ত পরে হবে’ বলেই মমতা ডেকে নিলেন অভিনেতা বিজু ফুকনকে। “বিজু আপনি আমাদের প্রার্থী হবেন?” বিজুর জবাব, “আপনি বলছেন, না করি কী করে?” পরে বিজু বললেন, “বাংলার শিল্পীদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী সব সময় থাকেন। আমাদের এখানে কোনও দল শিল্পীদের বেদনা উপলব্ধি করেনি। ভেবেছিলাম রাজনীতিতে আসব না। দিদি নিজে বলার পরে আসতে বাধ্য হলাম।”
বক্তৃতার শেষটুকু জুড়ে থাকল গান-সংলাপ আর শায়েরি। কখনও ‘যো ডরতা হ্যায় ও মরতা হ্যায়’, কখনও লতার গান। সব শেষে ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা।’ এ দিনই অসমিয়া ভাষায় প্রকাশিত হল মমতার ‘পরিবর্তন’ বইটির অনুবাদ।