সারদা কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রুখতে এ বার কেন্দ্রীয় আইনে সংশোধন করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাঁর বাজেটে ঘোষণা করেছেন, আইনের ফাঁকফোকর রুখতে চিট ফান্ড সংক্রান্ত ১৯৭৮ সালের আইনে সংশোধন করা হবে। এবং তা করা হবে আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কারের অঙ্গ হিসেবেই। জেটলির বক্তব্য, “যে সব ব্যক্তি বা সংস্থা আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে দেশের বহু গরিব মানুষকে ঠকিয়েছে, এর ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”
যদিও সারদার মতো সংস্থাগুলি সাধারণ মানুষের চলতি কথায় ‘চিট ফান্ড’ বলে পরিচিত হলেও আসলে সেগুলি আইনি সংজ্ঞায় চিট ফান্ডের আওতায় পড়ে না। এর জন্য যে আইন (প্রাইজ চিট অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিম ব্যানিং অ্যাক্ট, ১৯৭৮) রয়েছে, সেই আইন দিয়েও এই সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মূলত শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি পারে এই সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু এত দিন এই সংস্থাগুলি বেআইনি কাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা সেবি-র হাতে ছিল না। মনমোহন সিংহের জমানায় সেবি-কে আরও ক্ষমতা দিতে সেবি আইনের সংশোধন করা হয়। ২০১৩ সালেই সেবি আইন সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল। ওই বিলে ১৯৯২ সালের সেবি আইনের পাশাপাশি ১৯৫৬ সালের ‘সিকিওরিটিজ কনট্র্যাক্টস রেগুলেশন অ্যাক্ট’ এবং ১৯৯৬ সালের ‘ডিপোজিটারিজ অ্যাক্ট’-এ দরকার মতো সংশোধন করা হয়েছিল। কিন্তু মনমোহন সরকার বিলটি সংসদে পাশ করানোরই সুযোগ পায়নি। বাধ্য হয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হয়। এক বার অর্ডিন্যান্সের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে ফের অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওই অর্ডিন্যান্সকে আইনে রূপায়িত করা হবে। এর জন্য সংসদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এ বার চিট ফান্ড সংক্রান্ত আইনেও প্রয়োজনীয় বদল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন জেটলি। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, সারদা কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। সিবিআই তাদের তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু সেবি-র মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা ও আইনে যে খামতি রয়েছে, সে কথাও বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই জন্যই আইনের যাবতীয় ফাঁকফোকর বোজানোর চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষ যাতে এই ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা না রেখে বিমা প্রকল্পে অর্থ সঞ্চয় করেন, তার জন্যও সচেষ্ট হবে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনও জীবনবিমায় টাকা রাখেন না। বিমা সংস্থাগুলি প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছতেই পারেনি। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলি যাতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছোট ছোট অফিস খুলে প্রতিনিধি নিয়োগ করে, সে বিষয়ে কেন্দ্র পদক্ষেপ করবে বলে জানানো হয়েছে।