ঝাড়খণ্ড

অনুপজাতি মুখ্যমন্ত্রী রুখতে আসরে অর্জুন মুন্ডা-ঘনিষ্ঠরা

উপজাতি না অনুপজাতি এই বিভাজন ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ঝাড়খণ্ড বিজেপির অন্দরে। ফলে রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম প্রাক্-নির্বাচনী কোনও জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তা নিয়ে স্বস্তিতে নেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই বিজেপির নব-নির্বাচিত উপজাতি বিধায়কদের একটা বড় অংশ পরাজিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, তাঁকে ফের কোনও কেন্দ্র থেকে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করুক দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

শেষ হাসি কার! রাঁচিতে অর্জুন মুন্ডার বাড়িতে রঘুবর দাস (বাঁ দিকে)। ছবি: চন্দন পাল।

উপজাতি না অনুপজাতি এই বিভাজন ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ঝাড়খণ্ড বিজেপির অন্দরে। ফলে রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম প্রাক্-নির্বাচনী কোনও জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তা নিয়ে স্বস্তিতে নেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই বিজেপির নব-নির্বাচিত উপজাতি বিধায়কদের একটা বড় অংশ পরাজিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, তাঁকে ফের কোনও কেন্দ্র থেকে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করুক দল। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে মুন্ডার জন্য নিজের কেন্দ্র ছেড়ে দিতেও রাজি! সব মিলিয়ে মুন্ডাকে ঘিরে রাজ্য বিজেপিতে নয়া সমীকরণের ছায়া দেখছেন অনেকেই।

Advertisement

‘খাসতালুক’ খরসোয়াঁয় অর্জুনের হার একাধিক অনুপজাতি নেতাকেও মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে এনে দিয়েছে। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতারা এখনও বেশ সংশয়ে। আজ দিল্লিতে এ নিয়ে বৈঠকে বসে সংসদীয় বোর্ড। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের উপস্থিতিতে ঠিক হয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাঁচি যাবেন দু’জন পর্যবেক্ষক জে পি নাড্ডা এবং বিনয় সহস্রবুদ্ধে। শুক্রবার রাঁচিতে দলের বিধায়কদের সঙ্গে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগেই রাজ্য নেতাদের একটি অংশ বলতে শুরু করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ রঘুবর দাসের নাম এক রকম চূড়ান্তই করে ফেলেছেন দিল্লির নেতারা। রাজ্য বিজেপিতে মুন্ডার বিপরীত মেরুর নেতা রঘুবর। তিনি নিজেই আজ বিকেলে রাঁচির জেল মোড়ে মুন্ডার বাড়িতে যান। দলীয় সূত্রের খবর, মুন্ডার সাহায্য চাইতেই গিয়েছিলেন তিনি। এর পরেই সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রঘুবরের নাম ঘিরে জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে।

Advertisement

মুন্ডা অবশ্য প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে কোনও কথা বলতে নারাজ। আপাতত হার নিয়েই বেশি চিন্তিত তিনি। তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী নিজের গড়ে যে ভাবে হেরেছেন, তাতে বিরোধীরাও বিস্মিত। ময়না-তদন্তে নেমে মুন্ডা-শিবির ইতিমধ্যেই দলের অনুপজাতি নেতাদের হাত দেখছেন। মুন্ডা নিজেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে হারের পিছনে এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেননি। তবে বিজেপির মুন্ডা-বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, “দলের কিছু নেতার যদি সত্যিই খরসোয়াঁয় অর্জুন মুন্ডাকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে, তবে বলতে হবে ওঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতায় টান পড়েছে!” এই অংশের বক্তব্য, আসলে মুন্ডা নিজের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। খরসোঁয়ায় বিশেষ যেতেন না। তিন বারের মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে সে ভাবে উন্নয়নও হয়নি। বিজেপির অন্দরেই অভিযোগ, মুন্ডা মনে করতেন, তিনি না গেলেও তাঁকে ভোট দিয়ে খরসোঁয়ায় মানুষ ধন্য হয়ে যাবেন!

মুন্ডা-ঘনিষ্ঠ এক নেতা পাল্টা বলছেন, “রাজ্যের জন্য ভাবতে গিয়ে উনি নিজের আসনের জন্য সময়ই দিতে পারেননি।” ইচাগড়ের বিধায়ক সাধুচরণ মাহাতোও বলেছেন, “অর্জুন মুন্ডা দলের অন্য প্রার্থীদের জেতাতে গিয়ে নিজে হেরে গিয়েছেন। সারা রাজ্যে উনি দৌড়ে বেড়িয়েছেন। নিজের কেন্দ্রে সময় দিতে পারেননি।” তাঁর দাবি, দল ফের ওঁকে নির্বাচনে দাঁড় করাক। সাধুচরণ বলেন, “প্রয়োজনে আমি আসন ছেড়ে দেব। উনি ইচাগড় থেকে লড়ুন।” ঘাটশিলার বিধায়ক লক্ষণ টুডুর কথায়, “অর্জুন মুন্ডাজির জন্য কেন্দ্রের কোনও অভাব নেই। ঘাটশিলা থেকে উনি যদি দাঁড়ান, সেটা আমাদের সৌভাগ্য।”

আসলে অর্জুনের হারের পরে বিজেপি নেতৃত্ব যে ভাবে অনুপজাতি কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথা ভাবছেন, তাতেই শঙ্কিত উপজাতি বিধায়করা। সে কারণেই তাঁরা ‘মুন্ডা-লাও’ স্লোগান তুলেছেন। যার প্রথম সারিতে লক্ষণ, সাধুচরণ। দুমকায় মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে হারানো লুইস মরান্ডিও দাঁড়িয়েছেন মুন্ডার পাশে।

কিন্তু গোটা বিষয়টিতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ দলের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের অনুপজাতি নেতারা। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মোদীর বিজেপিতে এই ধরনের দাবি মুন্ডার রাজনৈতিক ভবিষ্যত আরও জটিল করে তুলবে।” দলের এই অংশের মতে, বিধায়কদের একাংশকে তাতানোর পিছনে অর্জুন মুন্ডার সক্রিয় মদত থাকতেও পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement