বাবা সিদ্দিকির (বাঁ দিকে) মৃত্যুর পর কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর পুত্র জ়িশান সিদ্দিকি (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাবা সিদ্দিকি খুন হয়েছেন মাস দেড়েকও হয়নি। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেলেন তাঁর পুত্র জ়িশান সিদ্দিকি। বান্দ্রা পূর্বে তাঁকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বোনপো বরুণ সরদেশাই। বান্দ্রার এই কেন্দ্রেই বাস উদ্ধবের। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে উদ্ধবের হাত থেকে তাঁর ‘ঘর’ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জ়িশান। এ বার যদিও সেই কংগ্রেসের সঙ্গে উদ্ধবের দল জোটে রয়েছে। বোনপোকে দিয়ে নিজের হারানো ‘ঘর’ পুনরুদ্ধার করে নিলেন উদ্ধব। ভোটের মুখে দলবদল করেও লাভ হল না জ়িশানের।
গত ১২ অক্টোবর বান্দ্রায় বিধায়ক পুত্রের দফতরের সামনেই গুলি করে খুন করা হয় এনসিপি নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে। সেই ঘটনার তদন্ত করছে মুম্বই পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের দলের হাত রয়েছে এই খুনের নেপথ্যে। বিদেশে লরেন্সের ভাই আনমোলের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছিলেন সিদ্দিকির শুটারেরা। শুধু তা-ই নয়, মুম্বই পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, হত্যাকারীদের ‘টার্গেট’ ছিলেন জ়িশানও। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বাবাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন ৩২ বছরের জ়িশান। কুড়িয়েছিলেন সহানুভূতি। কিন্তু তা ভোটের ময়দানে কাজে এল না।
ভোটের ঠিক মুখে গত মাসে দল বদলেছিলেন জ়িশান। বাবার মৃত্যুর পরেই তিনি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন অজিত পওয়ারের এনসিপিতে। তাঁর বাবা অবশ্য আরও আগে এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এ বার মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং উদ্ধবের দলের সঙ্গে জোট করেছিল কংগ্রেস। বান্দ্রা পূর্ব কেন্দ্রটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল উদ্ধবদের। ফলে নিজের কেন্দ্র থেকে টিকিট পাচ্ছেন না, একপ্রকার নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিলেন বিধায়ক জ়িশান। তার পরেই তিনি অজিতের দলের সঙ্গে হাত মেলান। এনসিপি (অজিত) তাঁকে বান্দ্রা পূর্ব থেকে টিকিট দিতে দেরি করেনি।
কংগ্রেসের হাত ধরেই জ়িশানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু। দল ছাড়ার পরে তিনি জানিয়েছিলেন, ১৮ বছর বয়স থেকে এই দলের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। মুম্বই যুব কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন দীর্ঘ দিন। গত ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস ছেড়ে তাঁর বাবা এনসিপিতে যোগ দিলে জ়িশানকে যুব কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন এই তরুণ নেতা। দল ছাড়ার পরেও এ নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বাবার মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করেছে কংগ্রেস। বান্দ্রা পূর্বে তাঁকে দিয়েই বাজিমাত করবে বলে ভেবেছিল অজিতের এনসিপি। কিন্তু বাস্তবে তা হল না।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, বান্দ্রা পূর্বে ১৯ রাউন্ডে গণনা হয়েছে। বরুণ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭০৮টি ভোট। আর ৪৬ হাজার ৩৪৩টি ভোট পেয়ে জ়িশান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ১১ হাজারের বেশি ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছেন।
বান্দ্রা পূর্বে উদ্ধবের দল জিতলেও সমগ্র মহারাষ্ট্রের ফলাফল তার বিপরীত। বিজেপি-এনসিপি (অজিত)-শিবসেনা (শিন্ডে)-র জোট ‘মহাজুটি’ মহারাষ্ট্রে বিপুল ভোটে জয়ের পথে। ২৮৮টির মধ্যে ২০০টির বেশি আসনে তারা এগিয়ে রয়েছে। বেশ কিছু আসনে ‘মহাজুটি’র জয় ঘোষিত। কংগ্রেস-শরদ-উদ্ধবদের জোট সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি।