কথায় বলে বাঘে ছুঁলে আঠারো আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তবে সাধ করে থানা-পুলিশ-জেল কেই বা চায়? বরং এ সব ঝুটঝামেলা থেকে বরাবরই শতহস্ত দূরে থাকতে চান সাধারণ মানুষ।তবে এ বার অপরাধ না করেও ‘জেলের ভাত’ খেতে পারেন আপনি।
জেলের পোশাকে, কয়েদিদের সঙ্গে রাত কাটানো, জেলের খাবার খেয়ে দিনযাপন—এ সব কেবল বইতে পড়েছেন বা লোকমুখে শুনেছেন? সে সব এ বার আপনার সঙ্গেও ঘটতে পারে। জেলের কয়েদিদের পোশাক পরে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানো, মেঝেয় ঘুমোনো এ সব অভিজ্ঞতা আগে না হলেও এ বার হবে। তাও আবার যে সে জেলে নয়, একেবারে দিল্লির তিহাড় জেলে!
যে জেলে আসারাম বাপু আছে, এক সময় আজমল কসাবও ছিল, সেই জেলই হতে পারে কয়েক দিনের জন্য আপনার ঠিকানা। এমনিতেই খুন-ধর্ষণ, স্মাগলিং, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে যুক্ত দেশের হাই প্রোফাইল কুখ্যাত অপরাধীদের এই জেলে রাখার রেওয়াজ আছে। সে তালিকায় রাজনীতিকরা থেকে শুরু করে স্বঘোষিত ধর্মগুরু কে নেই!
৪০০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি, ১৫ হাজারেরও বেশি অপরাধী বহনকারী এই জেল দেশের মধ্যে বৃহত্তম। এ বার এই জেলে আপনারও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে এগিয়ে এসেছে কেরল সরকার। রাজ্যের জেল দফতর এমনই এক ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে পারে আপনাকে। ‘ফিলস লাইক জেল’ নামক প্রোজেক্টে এ বার জেলের জীবনযাপনের সঙ্গেই পরিচয় করাতে চাইছে তারা।
কিন্তু কেন এমন অদ্ভুত ভ্রমণের পরিকল্পনা? দফতর সূত্রে খবর, ভারতের এই বৃহত্তম জেল ঘুরে দেখার জন্য প্রতি দিন দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর আবেদন জমা পড়ে। সে সব অনুরোধ খতিয়ে দেখেই এ বার এমন ভ্রমণের বন্দোবস্ত।
কী কী থাকবে এই প্রোজেক্টে? তিহাড় জেলের মধ্যেই অন্যান্য কুঠুরির মতো করে তৈরি করা হয়েছে আরও ৫-৬টি কুঠুরি। রয়েছে অ্যাটাচড বাথরুমও। তবে বাকি সবই জেলের মতো। সঙ্গীরা একে অন্যের সঙ্গে যাতে যোগাযোগ না করতে পারেন, সে দায়িত্ব পালন করবে কুঠুরির বিশাল উঁচু দেওয়াল।
তবে জেলের অন্য বন্দিদের থেকে ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা নেই। অতিথিদের কুঠুরিগুলো এমন ভাবেই বানানো, যাতে অপরাধীদের কুঠুরির সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ না থাকে। জেল ঘুরে দেখার সঙ্গে জেলের জীবনের স্বাদও পাবেন এই ভ্রমণে।
কিছু অর্থের বিনিময়েই এই জেলে ঢোকার ছাড়পত্র মিলবে। তার পর লক আপে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে রাখা হবে আপনাকে। জেলের কয়েদিদের মতো পোশাক পরে মেঝেতে শুতে হবে, খেতে হবে জেলের খাবার। বিকেলে বেড়িয়ে টুকটাক শ্রমও দান করতে হবে, যেমনটা সশ্রম কারাদণ্ডে হয়ে থাকে।
কেমন কাজ? দফতর সূত্রে খবর, কয়েদিদের মতোই কোনও কাজ, যেমন সেলাইফোঁড়াই, গম পেষাই, বাগান করা, মাটি খোঁড়া ইত্যাদি কায়িক শ্রমে যুক্ত রাখার কথা ভাবা হয়েছে। জেলের মানুষদের জীবনযাত্রার আঁচ দিতেই এই ব্যবস্থা। তবে কোনও জোরাজুরি নেই। অতিথিদের সুবিধা-অসুবিধা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা মেনেই তাঁদের থাকতে দেওয়া হবে।
এর মধ্যেই গোটা জেলচত্বর ঘুরে দেখারও সুযোগ মিলবে অতিথিদের। গোটা প্রোজেক্টটি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে অনুমতি এলেই প্রবেশমূল্য ধার্য করা হবে। তবে তিহাড়েই প্রথম নয়, তেলঙ্গানার সঙ্গারেড্ডি জেলেও ২০১৬ সাল থেকেই মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে এমন জেলভ্রমণ শুরু করছেন কর্তৃপক্ষরা।