আলাপচারিতা: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লখনউয়ে। পিটিআই
লখনউয়ের রাজভবনের করিডর। হাঁটতে হাঁটতে গভীর আলোচনায় মগ্ন দুই ব্যক্তি। একজনের বয়স একাত্তর বছর। অন্য জন পঞ্চাশে পা দিতে চলেছেন। প্রবীণ ব্যক্তিটি বয়সে ছোট জনের কাঁধে ডান হাত রেখে কিছু বোঝাচ্ছেন। অন্য জন মন দিয়ে তা শুনছেন।
রবিবাসরীয় দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এই ছবি প্রকাশ্যে আসতে দেশের রাজনৈতিক শিবিরে একটাই প্রশ্ন উঠল, কী কথা তাঁহার সাথে?
দু’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে হারের আতঙ্কই তার পিছনে প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের ফলাফল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিজেপির তিনটি নিজস্ব সমীক্ষার ফল পেশ করা হয়েছিল। তিন সমীক্ষায় তিন রকম ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথ নিজে বিজেপির জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হলেও বিজেপির কিছু সমীক্ষায় অশনি সঙ্কেত মিলেছে। কিন্তু তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করেও পালে হাওয়া টানা যাবে কি না, তা নিয়ে বিজেপি নেতারা অনেকেই নিশ্চিত নন। সে কারণেই মোদীকে যোগীর সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলতে হয়েছে বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন।
বিরোধী নেতারা কটাক্ষ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন চাপের মুখে। অমিত শাহ নিজেই বারাণসীতে, একেবারে প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে মেনে নিয়েছেন, ২০২৪-এ মোদীর প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ফেরার রাস্তা সুগম করতে হলে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরাতেই হবে। ভবিষ্যতে যোগী তাঁর চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠতে পারেন জেনেও মোদীকে সেই যোগীর কাঁধেই হাত রাখতে হচ্ছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের কটাক্ষ, “রাজনীতিতে এই সবও করতে হয়! যাঁকে মন থেকে পছন্দ নয়, তাঁর কাঁধে হাত রেখে কয়েক কদম এক সঙ্গে চলতে হয়!” কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আবার কটাক্ষের সুরে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যোগীকে কানে কানে বলেছেন, ‘আমার থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রীর গদি থেকে সরিয়ে রাজ্যপাল বানিয়ে দেব!’
শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশে তিন দিনের সফরে গিয়েছিলেন। শনি-রবিবার তিনি ডিজিপি-সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তার ফাঁকেই রবিবার সকালে আলাদা করে যোগীর সঙ্গে আলোচনা সেরে নেন। কিছু দিন আগে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যোগী আদিত্যনাথকে রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তা থেকেই স্পষ্ট ছিল, বিজেপির মধ্যে যোগীর গুরুত্ব বাড়ছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবি দেখেও বিজেপি নেতারা বলছেন, যোগী শীর্ষনেতৃত্বের ভরসার জায়গা হয়ে উঠছেন।
কিন্তু যোগী কি পারবেন বিজেপিকে ফের লখনউয়ের তখতে পৌঁছে দিতে? বিজেপির একাংশের মতে, শুধু তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারে কতখানি কাজ হবে বলা মুশকিল। কারণ এক বছর ধরে কৃষকেরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করেছেন। এত সহজে সেই হেনস্থার কথা ভুলে যাওয়ার নয়। নতুন বছরের গোড়াতেই নির্বাচন। তার উপরে লখিমপুর খেরির ঘটনা কৃষকদের ক্ষতে নুন ছিটিয়েছে। সর্বোপরি কৃষকরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও আন্দোলন থেকে সরতে নারাজ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, “মিথ্যে প্রতিশ্রুতি পোয়ানো জনতা প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করতে তৈরি নয়। কৃষকরা সত্যাগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছেন।”
মোদী-যোগীর আলাপচারিতায় কি নতুন কোনও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে মন্থন হয়েছে? যোগী নিজে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি টুইট করে একটি হিন্দি কবিতা তুলে ধরেছেন। যার অর্থ, ‘আমরা প্রতিজ্ঞা করে বেরিয়েছি, শরীর-মন অর্পণ করেছি, নতুন সূর্যোদয় ঘটাতে হবে, আকাশের থেকে উঁচুতে পৌঁছতে হবে, নতুন এক ভারত বানাতে হবে!’