এই দুই শিশুকেই থানায় নিয়ে যায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সঙ্গে কাকা। ছবি: সংগৃহীত।
ফের প্রশ্নের মুখে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বুলন্দশহরে বজরং দলের নেতৃত্বে থানায় তাণ্ডব, পুলিশের গাড়ি জ্বালানো এবং পুলিশকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার যোগী পুলিশের তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘গোহত্যা’-র ঘটনাটিই। যে বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজ থানায় তাণ্ডব চালানোর ঘটনার অভিযুক্ত, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই ‘গোহত্যা’র তদন্ত শুরু করল পুলিশ। আর সেই তদন্তে পুলিশ চার ঘন্টারও বেশি সময় আটক করল দুই নাবালককে। পাশাপাশি যে সাত গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমান। দুই নাবালক ছাড়া বাকিরা ঘটনার দিন গ্রামেই ছিলেনই না বলে জানা যাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম এবং পুলিশ সূত্রে।থানায় তাণ্ডব এবং পুলিশকর্মীকে খুনের ঘটনা ছেড়ে গোহত্যার তদন্তকেই কেন বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, তা নিয়েই উঠে গেল প্রশ্ন।
সোমবার সকালে ২৫টি গবাদি পশুর দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় বুলন্দশহরে। গো-হত্যার গুজব ছড়িয়ে পথে নামে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ হাজির হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। তখনই বিক্ষোভকারীদের আক্রমণে প্রাণ যায় সুবোধকুমার সিংহ নামে এক পুলিশ ইনস্পেকটরের। সুমিতকুমার সিংহ নামে এক যুবকেরও মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন যোগেশ রাজ নামে এক যুবক। বুলন্দশহর জেলার বজরং দলের প্রধান যোগেশের বয়ানের ভিত্তিতেই ওই গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তিনি পুলিশের কাছে ওই গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে গোহত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পড়লেও পুলিশ কর্মীকে হত্যার অভিযোগে এখনও তাঁকে গ্রেফতার করেনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
যোগেশ রাজের অভিযোগের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার নয়াবংশ গ্রামে সাত অভিযুক্তের খোঁজে হানা দেয় পুলিশ। তল্লাশি চালানো হয় ঘরে ঘরে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ১১ ও ১২বছর বয়সী দুই নাবালককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে এক আত্মীয়কেও নিয়ে যায় তারা।যে আত্মীয়কে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘দু’টি বাচ্চার সঙ্গে আমাকেও বুলন্দশহর থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ঘণ্টাচারেক ওখানে আটকে রাখা হয়েছিল আমাদের। ওদের নাম আর ফোন নম্বর লিখে দেওয়ার পর আমাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।’’
আরও পড়ুন: ‘সব টাকা ফেরত দেব, দয়া করে নিন’, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাঙ্ক আর সরকারকে আবেদন মাল্য-র
দুই নাবালকের কাছে এই পরিস্থিতি ছিল ভীষণই আতঙ্কের। তারা সংবাদমাধ্যমে বলেছে, ‘‘আমরা কোনও দিন থানায় যাইনি। খুব ভয় লাগছিল। কোনও কথাই আমরা বলতে পারিনি। পুলিশকে কাকা জানায়, আমাদের বয়স কম। আধার কার্ড দেখিয়ে সেই প্রমাণ দেওয়ার পর পুলিশ আমাদের ছেড়ে দেয়।’’
নয়াবংশ গ্রামের যে সাত মুসলমান নাগরিকের বিরুদ্ধে গোহত্যার অভিযোগ এনেছেন যোগেশ রাজ, সেই তালিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। তালিকার প্রথম নামটিই সুদাইফের। তিনি কোনও দিনই ওই গ্রামে থাকতেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তালিকায় দ্বিতীয় নাম ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তির। পুলিশ গিয়ে জানতে পারে, ওই গ্রামে দু’জন ইলিয়াস থাকতেন। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই অন্তত ১৫ বছর আগে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তৃতীয় নাম শরাফতের। তিনিও বহু দিন আগে গ্রাম ছেড়ে হরিয়ানায় গিয়ে বসবাস করছেন। তালিকায় নাম ছিল সরফুদ্দিন আর পারভেজের। তাঁরাও ঘটনার দিন নয়াবংশ গ্রাম থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বুলন্দশহরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ছিলেন। যোগেশ রাজের দেওয়া তালিকার মধ্যে মাত্র দু’জন ঘটনার দিন গ্রামে ছিলেন বলে জানতে পারে পুলিশ। সেই দু’জনই আবার নাবালক!
আরও পড়ুন: বেওয়ারিশ ‘গোমাতা’দের দাপটে ঘুম ছুটেছে রাজস্থানের চাষিদের
যোগেশ রাজের অভিযোগে বলা হয়েছিল, মহাও গ্রামের পাশে জঙ্গলের ধারে সাত গ্রামবাসীকে তাঁরা গরু কাটতে দেখেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই সাত জন পালিয়ে যান। সেই সাত জনের নামেই থানায় অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন যোগেশ রাজ। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, এই সাত জনই পার্শ্ববর্তী নয়াবংশ গ্রামের বাসিন্দা। যদিও যাঁদের বিরুদ্ধে যোগেশ রাজ অভিযোগ জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে তাঁদের পাঁচ জন গ্রামেই ছিলেন না, আর বাকি দু’জন ১১ এবং ১২ বছরের নাবালক। তাহলে কী যোগেশ রাজের অভিযোগের পিছনে লুকিয়ে আছে কোনও বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকায় আরও জোরাল হচ্ছে সেই প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: রাজ্য জ্বলছে, যোগী মগ্ন লেজ়ার শো-এ!
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)