সান্ত্বনা: পুলিশের গুলিতে নিহত বিবেক তিওয়ারির দুই মেয়ের সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
পুলিশের গুলিতে স্বামীর মৃত্যুর পরে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে লখনউয়ে নিহত অ্যাপল কর্মীর স্ত্রী জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সব দাবি মেনে নিয়েছেন। রাজ্য সরকারের উপরে তাঁর আস্থা আছে।
লখনউয়ের গোমতীনগর এক্সটেনশন এলাকায় গত শনিবার গভীর রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অ্যাপল কর্মী বিবেক তিওয়ারি। এক মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। পুলিশ কনস্টেবল প্রশান্ত চৌধুরির দাবি, গাড়ি থামিয়ে আলো নিভিয়ে রেখেছিলেন বিবেক। ফলে সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা গাড়ির কাছে যান। সেই সময়ে বিবেক প্রায় তাঁদের গায়ের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালান তিনি। কিন্তু সেই দাবি মানতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার ও পুলিশের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রশান্ত ও তাঁর সহকর্মী সন্দীপ কুমারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে।
ঘটনার পরে বিবেকের স্ত্রী কল্পনা দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর সঙ্গে দেখা করা উচিত। ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি চেয়ে যোগীকে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। সেই সময়ে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দেয় কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি। এ দিনও বিবেকের স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
আজ মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন কল্পনা। সঙ্গে তাঁর দুই মেয়েও ছিল। পরে তিওয়ারি পরিবারের জন্য ২৫ লক্ষ, বিবেক-কল্পনার মেয়েদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ও বিবেকের মায়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। আগেই কল্পনাকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে কল্পনা বলেন, ‘‘আমার সব দাবি উনি মেনে নিয়েছেন। রাজ্যের উপরে আমার আস্থা আছে। কোনও কড়া পদক্ষেপ করার মতো অবস্থা আমার নেই।’’
আরও পড়ুন: সংবিধানই শেষ কথা, বললেন বিচারপতি গগৈ
ঘটনাটি নিয়ে যোগী সরকার তথা প্রশাসনের অন্দরেও অসন্তোষের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। আজ যোগী সরকারেরই আইনমন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠক দাবি করেন, ‘‘পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই প্রথম এফআইআরটি সঠিক ভাবে লেখা হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে।’’ বিজেপির জোট শরিক ও যোগী সরকারের আর এক মন্ত্রী ওমপ্রকাশ রাজভড়ের দাবি, ‘‘সংঘর্ষের নামে টাকা নিয়ে পুলিশ খুন করছে।’’ কিন্তু পুলিশের নীচুস্তরের কর্মীদের একাংশ আবার দাঁড়িয়েছেন অভিযুক্ত প্রশান্ত চৌধুরি ও সন্দীপ কুমারের পক্ষে। ফেসবুকে তাঁদের শুরু করা প্রচারের ফলে প্রশান্তের স্ত্রী রাখীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে।
বিবেক তিওয়ারি হিন্দু হলেও বিজেপি তাঁকে রক্ষা করেনি বলে টুইটারে মন্তব্য করেছিলেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল। তার ফলে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লির তিলক মার্গ থানায় এফআইআর করেছেন বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়। আজ কল্পনা বলেন, ‘‘কেজরীবালের এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িকতার রং দেওয়া অনুচিত। নরেন্দ্র মোদী সরকার তো বৈষম্যমূলক আচরণ করছে না।’’ কল্পনার কথায়, ‘‘কেজরীবাল আমাদের যন্ত্রণা বোঝেন না। কেবল রাজনীতি করছেন।’’
তবে কল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আপাতত সন্তুষ্ট হওয়ার বার্তা দিলেও বিরোধীরা থামছেন না। আজ বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, ‘‘আমরা তিওয়ারি পরিবারের পাশে আছি। সরকারের যদি এই ঘটনায় মদত না থাকে তবে তদন্তে কোনও দেরি হওয়া উচিত নয়।’’