অনিল অম্বানী।
শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাল ইডি। ইয়েস ব্যাঙ্কের আর্থিক নয়ছয়ের কাণ্ডের তদন্তে নেমে আজই অনিল অম্বানীকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আরও সময় চেয়ে আর্জি জানান অনিল। ইডি সূত্রের খবর, তাঁকে অন্য এক দিন আসতে বলা হবে। এসেল গোষ্ঠীর প্রোমোটার সুভাষ চন্দ্র, জেট এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গয়াল ও ইন্ডিয়াবুলসের চেয়ারম্যান সমীর গহলৌতকেও সমন পাঠানো হয়েছে।
রাফাল-কাণ্ডে রাহুল গাঁধীর অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বন্ধু শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে রাফাল চুক্তিতে বরাত পাইয়ে দিয়েছেন। সেই অনিল অম্বানীকে ইডি ডেকে পাঠানোর পরে কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, সবটাই আসলে লোক দেখানো। কাজের কাজ কিছুই হবে না। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য আগেই বলেছেন, অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স গোষ্ঠী, সুভাষ চন্দ্রের এসেল গোষ্ঠীর মতো সংস্থাকে ইউপিএ আমলেই ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দেওয়া হয়।
ইয়েস ব্যাঙ্কের থেকে যে সব সংস্থা বিরাট পরিমাণে ঋণ নিয়েও শোধ করেনি, তাদের মধ্যে অনিল অম্বানীর সংস্থা অন্যতম। ইয়েস ব্যাঙ্ক অনিল অম্বানীর গোষ্ঠীকে প্রায় ১২,৮০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। তা সুদে-আসলে বেড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু ঋণ শোধ হয়নি। ইয়েস ব্যাঙ্ক ডুবতে বসার পরে ইডি-সিবিআই তদন্তে নেমে দেখতে পায়, ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সিইও রাণা কপূর বিভিন্ন সংস্থাকে ঝুঁকি সত্ত্বেও ঋণ পাইয়ে দেন। তার বিনিয়মে ঘুষ হিসেবে ওই সব সংস্থা নিজের ও তাঁর স্ত্রী-কন্যার মালিকানাধীন সংস্থায় টাকা ঢেলেছিল। ডিএইচএফএল-এর ক্ষেত্রে ৬০০ কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগে তদন্তের পরে বাকি ঋণ বিলির ক্ষেত্রেও একই ভাবে ঘুষ নেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়।
সিবিআই ও ইডি তদন্ত শুরু করার পরেই অনিল অম্বানীর সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, রাণা কপূর বা তাঁর স্ত্রী, কন্যার কোনও সংস্থার সঙ্গে তাদের কোনও লেনদেন নেই। ইয়েস ব্যাঙ্কের থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক ব্যবসায়িক লেনদেনের নিয়ম মেনেই ঋণ নেওয়া হয়েছে। ইয়েস ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করতেও সংস্থা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনিল অম্বানী গোষ্ঠী এই দাবি করলেও ইডি-কর্তাদের বক্তব্য, অনিলকে ইডি-র সামনে এসে ব্যাখ্যা করতে হবে কোন শর্তে তিনি এই ঋণ পেয়েছিলেন। এই ঋণের বিনিময়ে তাঁর সঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্ক বা তার কর্তাদের সঙ্গে আলাদা কোনও চুক্তি হয়েছিল কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হবে। রাণার আমলে ৭৮টি বড় গোষ্ঠী ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছিল। যার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা শোধ হয়নি। এর মধ্যে অনিল অম্বানী-সহ পাঁচটি বড় গোষ্ঠীর সঙ্গে লেনদেন নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই-ইডি।