অর্থমন্ত্রক থেকে ছেলের বিদায়ের পর এ বারে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ফের সরব হলেন বাবা যশবন্ত সিনহা।
গত সপ্তাহেই মন্ত্রিসভার রদবদলে অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে জয়ন্ত সিনহাকে। আইআইটি, হার্ভার্ডের জয়ন্ত সিনহাকে দেওয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত লঘু মন্ত্রক বিমান দফতর। নিজের অসন্তোষ চেপে রেখেই নতুন মন্ত্রকের কাজ শুরু করেছেন জয়ন্ত। কিন্তু মোদীর বিরুদ্ধে এ বারে অসন্তোষ বেরিয়ে পড়ল বাবা ও বিজেপির প্রবীণ নেতা যশবন্তের। অতীতে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীদের সঙ্গে নিয়ে মোদী ও অমিত শাহের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহও করেছিলেন। তবে এ বারে একটু সতর্ক হয়ে ঘুরপথে আঘাত করলেন মোদীকে— অর্থনীতির বিষয়েই। সাম্প্রতিক আফ্রিকা সফরেও যে প্রধানমন্ত্রী বারংবার দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে বড়াই করছেন, সেখানেই আঘাত হানলেন যশবন্ত।
মোদী জমানায় আর্থিক বৃদ্ধির হারকে কিছু দিন আগেই অতিশয়োক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল মার্কিন সরকারের বিদেশ দফতর। যশবন্ত দাবি করেছেন, নতুন পদ্ধতিতে সরকারি ভাবেই কিছু গরমিল থাকছে। যে গরমিলের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার মাপার পদ্ধতি বদলে ফেলায় গত দুই অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৭.২% ও ৭.৬%-য় পৌঁছেছে। কিন্তু গরমিল বাদ দিলে বৃদ্ধির হার ৩.৯%-এ নেমে আসে। তাঁর আমলা জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে যশবন্ত যুক্তি দিয়েছেন, আগে উৎপাদনের পরিমাণের ভিত্তিতে জিডিপি মাপা হত। তাতেই তথ্য সংগ্রহে অনেক ভুলভ্রান্তি হত। এখন উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে কী পরিমাণ মূল্য যোগ হচ্ছে, তার ভিত্তিতে জিডিপি মাপা হচ্ছে। ফলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি।
মোদী সরকারকে যশবন্তর সাবধানবাণী, ‘‘এর ফলে গোটা ব্যবস্থার উপরেই মানুষের আস্থা চলে যেতে পারে। শিল্পে উৎপাদন বাড়ছে না। মাসের পর মাস রফতানি কমছে। ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। বেসরকারি লগ্নি আসছে না। কৃষিতে দুর্দশা চলছে। পরিষেবা ক্ষেত্র একই জায়গায় আটকে। তা হলে এই আর্থিক বৃদ্ধি আসছে কোথা থেকে?’’ বস্তুত, আর্থিক বৃদ্ধির এই মাপার পদ্ধতি নিয়েই কিছু দিন আগে টুইটে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। সেই সময় তাঁর এই মন্তব্যকেও মোদীর বিরুদ্ধে হিসেবে দেখা হয়েছিল। যা নিয়ে বিস্তর শোরগোল হয়। দল থেকেও তাঁকে বিরত থাকতে বলা হয়। যার পর স্বামী সাফাই দিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তিনি কিছু বলেননি। সংবাদমাধ্যম তাঁর বক্তব্য বিকৃত করেছে।
কিন্তু সেই একই বিষয় নিয়ে এ বারে সরব হলেন যশবন্ত। এমন একটি সময় যখন তাঁর ছেলেকে অর্থমন্ত্রক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র আর্থিক বৃদ্ধির মাপার হার নিয়ে সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হননি তিনি। পরোক্ষে মোদীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, দেশের সমালোচকদের কথা যদি না-ও শোনে, অন্তত ‘ভাল বন্ধু’ আমেরিকার কথা তো শোনা উচিত। যে রাজনৈতিক মহলে এই বৃদ্ধির হার নিয়ে লাফালাফি হচ্ছে, অন্তত সেটি নিয়ে ওয়াশিংটনকে জবাব দেওয়া উচিত। যশবন্ত তাঁর এই নব্য আক্রমণ এতটাই সুকৌশলে করেছেন যে বিজেপি আপাতত মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর অমিত শাহ বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন মোদীর সঙ্গে। দলের এক নেতার কথায়, যশবন্ত সিনহা যে বরাবরই মোদী-শাহের বিরুদ্ধে, এটি নতুন কথা নয়। কিন্তু তাঁর ছেলের বিদায়ের পর অর্থনীতির বিষয় নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় জয়ন্ত সিনহার আগ বাড়িয়ে মন্তব্য, নিজের বাড়িতে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্ণধারদের নিয়ে পার্টি দেওয়া নিয়ে অরুণ জেটলি অনেক দিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। জয়ন্ত অর্থমন্ত্রকে থাকার সময় তাঁর স্ত্রী পুনিতাকে ইনফোসিসের নির্দেশক বানানো নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। এই বিতর্কিত চা-চক্রেও হাজির ছিলেন পুনিতা। প্রধানমন্ত্রীর সচিবলায় সূত্রের খবর, তাঁকে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও রাশ টানেননি জয়ন্ত। এই বিষয় নিয়ে জয়ন্ত কোনও কথা না বললেও তাঁর স্ত্রী মুখ খোলেন। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িতে চা-চক্রের যে আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অনুমতি নিয়েই করা হয়েছিল। এ ধরনের চা-চক্রের আয়োজন কোনও নিয়মবিরুদ্ধ নয়। পুনিতার মতে, ইনফোসিসে তাঁর নিয়োগ তাঁর যোগ্যতার বলেই হয়েছে।