আট মাস ধরে বন্ধ কাছাড় কাগজ কল। অসহায় অবস্থায় কয়েক হাজার অস্থায়ী কর্মী। উৎকণ্ঠায় ৮৩৭ জন স্থায়ী কর্মচারীও। শিলচর, গুয়াহাটি থেকে নয়াদিল্লি— নেতা-আমলাদের মধ্যে যাঁকেই সামনে পাচ্ছেন, তাঁকেই কাগজ কল খোলার ব্যাপারে সাহায্য করতে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। ওই অনুরোধ নিয়ে এ বার তাঁরা দেখা করলেন অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পালের সঙ্গে।
কাছাড় কাগজ কল দক্ষিণ অসমের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকায় দক্ষিণ অসমের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়ছে। বাঁশ চাষি, ঠিকাদার, ঠিকা শ্রমিক, লরির মালিক-চালক, ব্যবসায়ী— সবাই পড়েছেন সঙ্কটে।
কেন বন্ধ ওই মিল? আইএনটিইউসি নিয়ন্ত্রিত কাছাড় পেপার প্রজেক্ট ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি মানবেন্দ্র চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, মণিলাল জায়গিরদার-রা ডেপুটি স্পিকার দিলীপবাবুর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জানান— সমস্যার শুরু ২০০৭ সালে। বাঁশগাছে ফুল দেখা দিয়েছিল সে বছর। প্রচুর গাছ কেটে ফেলে
দেওয়া হয়। সেই থেকে মিলে কাঁচামালের সমস্যা দেখা দেয়। উৎপাদন কমে যায়।
পরে যখন নতুন বাঁশগাছ কাটার সময় হয়, তখন সামনে আসে অন্য সমস্যা। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মেঘালয়ে কয়লা খনন বন্ধ হয়ে যায়। কাগজ কল কর্তৃপক্ষ বিকল্প কয়লার ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে মার খায় উৎপাদন। পরে চড়া দামে কয়লা কিনে আরও বেশি সমস্যায় পড়ে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের ওই কাগজ কল। আয়-ব্যয়ে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ১ লক্ষ টন উৎপাদন ক্ষমতার কাগজ কলে গত বছর মাত্র ১২ হাজার টন কাগজ তৈরি করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে সেখানে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মচারী সংগঠনের সদস্যরা জানিয়েছেন, বন্ধ কারখানায় এখন ৪২ কোটি টাকার বাঁশ পচে নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে যন্ত্রপাতিগুলিও। বিভিন্ন পাইপলাইন অকেজো হয়ে পড়ছে। ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ডেপুটি স্পিকারকে জানান, ওই কাগজ কল শুধু লাভ-লোকসানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ কলটিকে চালানো প্রয়োজন। কারণ অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া একটি অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কারখানার ভবিষ্যৎও।
তাঁদের দাবি, কাঁচামালের নিয়মিত জোগান নিশ্চিত করে ১০০ শতাংশ উৎপাদন করা গেলে লোকসান হবে না এখানে। কারণ সেখানে উচ্চমানের কাগজ তৈরি হয়। বাজারে তার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বাঁশগাছের ফুল ফোটার সমস্যা কেটে গিয়েছে। বাঁশেরও এখন আর অভাব নেই। এর চেয়ে বড় কথা, ব্রডগেজ লাইনে যুক্ত হয়েছে এই অঞ্চল। ফলে কাঁচামাল আনা, কি উৎপাদিত সামগ্রী বাজারে পৌঁছনো— পরিবহণ খরচ অনেক কম হবে। শুধু কাগজ কলের ভিতরে মিটারগেজ লাইনটিকে ব্রডগেজে বদলে নিলেই হল। তবে নতুন করে মিলটি চালাতে গেলে যে এখন মোটা অঙ্কের একটা টাকার প্রয়োজন, তাও তাঁরা উল্লেখ করেন।
মানবেন্দ্রবাবুরা ডেপুটি স্পিকারের মাধ্যমে বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর নজরে নিতে চাইছেন। দিলীপবাবু তাঁদের জানান, তিনি ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন। মুখ্যমন্ত্রীই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে নেবেন। তা হলে বেশি ফলদায়ক কবে।
দিলীপবাবু ইউনিয়ন নেতাদের এ কথাও জানিয়ে দেন, তিনি সব করতে রাজি রয়েছেন। কিন্তু কাগজ কলের এত দিনের কার্যকলাপ নিয়ে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু বাঁশের সঙ্কট, কয়লা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞার জন্য কাগজ কলটি বন্ধ হয়নি। কোটি কোটি টাকা নানা ভাবে লোপাটও হয়েছে।’’
কাছাড় কাজজ কলের এক পদস্থ সূত্র জানান, সন্তোষমোহন দেব বিভাগীয় মন্ত্রী থাকার সময় সেখানে একটি বয়লার নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি এখনও পর্যন্ত চালু করা হয়নি। এর মধ্যে বয়লারটির অনেক যন্ত্রপাতির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ফলে সেটিকে চালু করার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। এখন মূলত বয়লার সঙ্কটের জন্যই মিলটি বন্ধ রয়েছে বলে সূত্রটি জানান। তিনি বলেন, ‘‘কাছাড় কাগজ কলের বয়লারগুলি মেঘালয়ের কয়লার উপযোগী করে বানানো। ওই কয়লা পাথরের মতো। কিন্তু অন্য জায়গার কয়লা গুঁড়ো প্রকৃতির। সেগুলিই বয়লারের ক্ষতি করে দিয়েছে। দু’টি বয়লার মেরামত করা হয়েছে। সেগুলি ৬ মাস, ১ বছর চলতে পারে। ফলে নতুন বয়লার কেনার কথাও ভাবতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের আরেকটি কাগজ কল রয়েছে জাগি রোডে। বাঁশের অভাবে কয়েক মাস ধরে সেটিও বন্ধ।