Opposition Alliance

‘ইন্ডিয়া’ অটুট রাখতে ভরসা কথা ও কমিটি, দাবি তিন ‘চিড়’ মেরামতের, সংঘাত কমবে কি?

বুধবার রাতে কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা একতরফা ভাবে ঘোষণা করে দেন, চব্বিশের ভোটে দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনে একাই লড়বে তাঁর দল। অলকার সেই ঘোষণার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আপ।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫৮
Share:

একত্র: বিরোধী সমাবেশ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্টাল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (‘ইন্ডিয়া’), বেঙ্গালুরু, ১৮ জুলাই। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যে-রাজ্যে ‘কুস্তি’ অথচ দিল্লিতে ‘দোস্তি’।

Advertisement

‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরাও একান্তে মানছেন যে, একই সঙ্গে লড়াই এবং সখ্যের এই বাস্তবচিত্রকে বার বার পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বলেই এখনও পর্যন্ত কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা ভঙ্গুর দেখাচ্ছে বিজেপি-বিরোধী জোটকে। কখনও জোটের অন্যতম শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ঝাড়গ্রামের এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে বিজেপির ‘আঁতাঁতকে’ কটাক্ষ করে নাম রাখছেন ‘বিজেন্ডিয়া’। বলছেন, অন্তত বঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র সব ভোট শুধু তৃণমূলকে দিতে। আবার শনিবারই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল। পাল্টা দিতে ছাড়েনি কংগ্রেসও। এই পরিস্থিতিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে একজোট রাখতে প্রায় প্রতিদিনই পরস্পরের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেলে’ কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার উপরে আস্থা রাখছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আজ এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, জোটবদ্ধ বিরোধী দলগুলির মধ্যে সংঘাত কমানোর জন্য আসন্ন মুম্বই বৈঠকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হবে। সেখানে সমন্বয় কমিটির পাশাপাশি আরও চারটি ভারপ্রাপ্ত কমিটি গঠিত হবে বলেও জানানো হয়েছে। মুম্বই বৈঠকের পরে প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি এড়ানোর একটি খসড়া মডেল তৈরির চেষ্টা করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। তা যত দিন না হয়, তত দিন নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিবাদভঞ্জনের প্রক্রিয়া যা চলছে, তা-ই চলবে। এক বিরোধী নেতার কথায়, “এক দিকে কংগ্রেসকে একঘরে করার জন্য অন্য বিরোধী দলগুলিকে নানা ভাবে বিচ্ছিন্ন করতে বিজেপির লাগাতার প্ররোচনা রয়েছে। তা সে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে হোক, বা দল ভেঙে। পাশাপাশি, রাজ্যে যুযুধান দলগুলিরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখার।”

Advertisement

এই টানাপড়েনের ছবি বঙ্গেও। সম্প্রতি কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী সংসদে অনাস্থা বিতর্কের সময়ে সাসপেন্ড হওয়ার সময়ে দিল্লিতে তৃণমূলের সাংসদদের তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। আবার ঝাড়গ্রামের মঞ্চ থেকে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামকে এক পংক্তিতে বসিয়ে কটাক্ষ করেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলছেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয়, ওখানে জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া আর এখানে বিজেন্ডিয়া! মানুষের তো একটা নীতি থাকে। সেই নীতি মেনে চলতে হয়। বাংলায় (বিজেপির পাশাপাশি) আমাদের লড়াই সিপিএমের বিরুদ্ধে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও।”

শনিবারই আবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বক্তব্য, কংগ্রেসশাসিত ছত্তীসগঢ়ে বিদ্যালয়গুলির অবস্থা শোচনীয়। জবাবে কংগ্রেস নেতা পবন খেরার চ্যলেঞ্জ, যে কোনও একটি ক্ষেত্র বেছে নিয়ে দিল্লির আপ সরকারের সঙ্গে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস সরকারের তুলনামূলক বিতর্কে তিনি প্রস্তুত।

রাজ্যে-রাজ্যে লড়াইয়ের এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই তাই টিম-‘ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য, জাতীয় স্তরে বাঁধুনিকে ধরে রাখা। সে কাজে কিছুটা সাফল্যও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধী শিবির। দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র এক সক্রিয় নেতা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি তিনটি চিড় ধরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বুঝিয়ে তিনটিই মেরামত করা গিয়েছে।

প্রথমত, সাম্প্রতিক বাদল অধিবেশনে আরএলডি নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ জয়ন্ত চৌধরি বিরোধীদের হয়ে দিল্লির অধ্যাদেশ সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে অংশ নেননি। বিরোধী নেতাদের তিনি জনিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি ভোট দিলে, রাজ্যসভায় এককাট্টা বিরোধীদের সংখ্যা দাঁড়াত ১০৩। বিষয়টি নিয়ে ‘অনাস্থা এবং সন্দেহের বাতাবরণ’ সেই সময়ে তৈরি হয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এর পরে জয়ন্তের সঙ্গে ধারাবাহিক দৌত্য চলে কংগ্রেস, তৃণমূল ও ডিএমকে নেতৃত্বের। এর পরেই তিনি বিবৃতি দিয়েছেন, “যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী ‘ইন্ডিয়া’র কথা বলছেন, তাতে স্পষ্ট যে, তিনি ভয় পেয়েছেন। এই জোটের প্রয়াস সফল হবেই। এই প্রয়াস সহজ নয়। প্রত্যেকটি দল পৃথক, তাদের আলাদা আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমরা লক্ষ্যে সফল হব। ‘ইন্ডিয়া’র একটি দর্শন রয়েছে।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জয়ন্ত আরও বলেন, “যাঁরা আমাকে বোঝেননি, তাঁরা ভিন্ন কথা বলেছেন। আমি অত্যন্ত গোঁয়ার মানুষ, মাথায় এক বার যা ঢুকে যায়, তা বদলায় না।” যদিও ঘরোয়া ভাবে ‘ইন্ডিয়া’র এক নেতা বলছেন, বিষয়টি তাঁর ‘মাথায় ঢোকাতে’ রাজনৈতিক দৌত্যের প্রয়োজন হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বুধবার রাতে কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা একতরফা ভাবে ঘোষণা করে দেন, চব্বিশের ভোটে দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনে একাই লড়বে তাঁর দল। অলকার সেই ঘোষণার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আপ। বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ক্ষত মেরামতিতে নেমে পড়ে কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলের সিদ্ধান্ত বা আসন সমঝোতা নিয়ে ঘোষণা করার অলকা কেউ নন। কোনও রকম জোট নিয়ে আলোচনা হতে পারে শুধু সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের স্তরে। অর্থাৎ, একেবারে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের স্তরে। এ কথাও বলা হয় যে, লাম্বা আদৌ এ রকম কিছু বলেননি, সংবাদমাধ্যমে তা বাড়িয়ে লেখা ও বলা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক শিবির বলছে, লাম্বার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া গেলেও, আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে যে সংঘাতের চোরাস্রোত রয়েছে, তা আজ কেজরীওয়ালের ছত্তীসগঢ়ের বিদ্যালয় সংক্রান্ত মন্তব্যেই স্পষ্ট।

তৃতীয়ত, গত শনিবার রাতে পুণের কোরেগাঁও পার্ক এলাকায় শিল্পপতি অতুল চোরদিয়ার বাংলোয় প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয় এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার এবং অজিত পওয়ারের। ভাইপো অজিতের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরে মহারাষ্ট্র ও জাতীয় রাজনীতিতে নানা জল্পনার আবহ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিজেপি পওয়ারকে পদের প্রস্তাব দিয়েছে বলেও গুঞ্জন ওঠে। সূত্রের খবর, এর পরে পওয়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক নেতাদের। পওয়ার-ঘনিষ্ঠ শিবসেনা (উদ্ধবপন্থী) নেতা সঞ্জয় রাউত সংবাদমাধ্যমকে এবং ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদেরও জানান, পওয়ারের বিরোধী মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। প্রসঙ্গত, এর আগে এই একই কথা তৃণমূলের দুই সাংসদকে জানিয়েছিলেন শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement