সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত।
সেনাবাহিনীতে মেয়েদের আরও ‘ক্ষমতায়ন’ চান সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। তিনি জানিয়েছেন, চলতি নিয়ম ভেঙে এ বার যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা করতে দেখা যেতে পারে মেয়েদের। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান আজ জানিয়েছেন, মেয়েরাও যাতে সেনা জওয়ান পদে যোগ দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রাথমিক ভাবে সেনা পুলিশ হিসেবে নিয়োগ করা হবে মেয়েদের। তার পর ধাপে ধাপে এগিয়ে এক সময় ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুদ্ধ করবেন মেয়েরাও। সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন ও ইজরায়েলে সরাসরি যুদ্ধে নামতে পারেন মেয়েরা। পুরুষপ্রধান সেনাবাহিনীতে এই ভাবে লিঙ্গ বৈষম্য ভাঙতে পেরেছে বিশ্বের হাতে গোনা ক’টি দেশ। এ বার সেই তালিকায় জায়গা করে নিতে চায় ভারতও। রাওয়তের কথায়, ‘‘আমি চাই মেয়েরা সেনা জওয়ান হিসেবে যোগ দিতে এগিয়ে আসুক। খুব তাড়াতাড়িই এটা হবে। প্রাথমিক ভাবে আমরা সেনা পুলিশ হিসেবে মহিলাদের যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই।’’
বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী, বাহিনীর চিকিৎসা, আইন, শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যোগ দিতে পারেন মেয়েরা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের শারীরিক ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকায় সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় না তাদের। সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, সমস্যা কিছু থাকলেও জওয়ান হিসেবে মেয়েদের নিয়োগ করতে চান তিনি। তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শুধু সুযোগ দিলেই হবে না, কাচের দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি ও সাহস দেখাতে হবে মেয়েদেরও।’’
সেনা পুলিশের কাজ কী?
সেনা ছাউনি ও ঘাঁটিগুলিতে নজরদারি চালানো, সেনা জওয়ানেরা কোনও নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেওয়া, তাঁদের চলাফেরার উপরে নজর রাখা, যুদ্ধাপরাধীদের তত্ত্বাবধান করা ও প্রয়োজনে সিভিল (অসামরিক) পুলিশকে সাহায্য করা।
গত বছর যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে তিন মহিলাকে নিয়োগ করেছে বায়ুসেনা। কোনও রকম ছাড় দিয়ে নয়, যোগ্যতার চুলচেরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই ওই পদে যোগ দিতে পেরেছেন অবণী চতুর্বেদি, ভাবনা কান্থ ও মোহনা সিংহ। নৌবাহিনীতেও আইনি, নৌ-স্থাপত্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মেয়েরা যোগ দিতে পারলেও জাহাজ সমুদ্রে থাকাকালীন কোনও কাজ করতে পারেন না তাঁরা। সম্প্রতি মেয়েদের সে সুযোগও দিতে চেয়েছে নৌসেনা।
এ দিন, যুদ্ধাস্ত্র ও উপকরণ তৈরিতে বেসরকারি সংস্থার অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে বিপিন রওয়াত। তাঁর মতে, এর ফলে সেনাবাহিনীর অধুনিকীকরণে সুবিধা হবে। এই নতুন অংশীদারির মডেলে বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে বিদেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির যৌথ উদ্যোগে এ দেশে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ডুবোজাহাজ ও কামান তৈরির ছাড়পত্র দেবে সরকার। রাওয়তের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে আধুনিকীকরণ জরুরি। আগামী সাত-আট বছরের মধ্যে আমাদের কামানগুলি বদলে ফেলতে হবে। বদলে ফেলতে হবে পুরনো প্রযুক্তিও। সেই প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা ভাল।’’