প্রতীকী ছবি
গত বছর ইদে বাড়িতে আসা অতিথিদের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন অসমের বঙ্গাইগাঁওয়ের অভয়াপুরীর বাসিন্দা রাজিনা পারভিন সুলতানা। সেই ছবিও তোলা হয়। যে টেবিলে খাবার রাখা হয়েছিল, সেই টেবিলের চাদরের সঙ্গে জাতীয় পতাকার মিল থাকার অভিযোগ তুলে পুলিশে যায় বজরঙ্গ দলের স্থানীয় শাখা। পুলিশ দেশদ্রোহের অভিযোগে রাজিনা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে।
গুয়াহাটি হাইকোর্ট পরে এই ঘটনায় ‘দেশদ্রোহে’র কোনও প্রমাণ না থাকার কথা জানিয়ে জামিন মঞ্জুর করলেও তার আগে মাস দু’য়েক জেলে থাকতে হয় রাজিনাকে। অভিযোগ, বিজেপি-শাসিত অসমে রাজিনার উপরে যে ভাবে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের হয়েছে, তেমনটা হচ্ছে গোটা দেশ জুড়েই। পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকে দেশদ্রোহের অভিযোগ দায়ের হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে অনেকটা।
২০১০ থেকে দায়ের হওয়া দেশদ্রোহের সমস্ত অভিযোগগুলির একটি ডেটাবেস তৈরি করেছেন একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাংবাদিক। ‘আর্টিকল ১৪’ নামে একটি পোর্টালে প্রকাশিত ওই তথ্য বিশ্লেষণ করে দাবি করা হয়েছে, ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে দেশদ্রোহ আইনে মহিলাদের অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে ১৯০ শতাংশ।
রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত নারীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী, চিত্র পরিচালক, বিশিষ্টজন, আদিবাসী, আন্দোলনকারী, ছাত্রী, রাজনীতিবিদ, গৃহকর্ত্রী— সকলেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯-এ এনআরসি-সিএএএ নিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন বহু মহিলা। অনেকে রাস্তায় নেমে অবস্থান, গান-নাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তখন তাঁদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে দেশদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ। বিজেপি শাসিত বিহারে, কর্নাটকে এনআরসি-সিএএ নিয়ে নাটকে দেশদ্রোহের অভিযোগে একাধিক মহিলাকে গ্রেফতার করার ঘটনা ঘটেছে।
২১ বছরের পরিবেশকর্মী দিশা রবিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করার পরে আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে কর্নাটকের পুলিশকে। ইচ্ছাকৃত ভাবে বারবার অশান্তি তৈরি করা বা হিংসায় উস্কানি দেওয়ার ঘটনা পেলে তবেই এই ধারায় পুলিশের মামলা করা উচিত বলে মত আইন গবেষকদের। দিশার ক্ষেত্রে তা কিছুই মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
দিশার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী সরকারের আমলে দেশদ্রোহ আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ নিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটিশরা গান্ধী, তিলকের উপরে অত্যাচার করার জন্য এই আইন ব্যবহার করত। আর বিজেপির আমলে সাধারণ মানুষের, নারীদের দমনপীড়নের জন্য তা ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি সরকার এতই ভীরু যে ২১ বছরের পরিবেশকর্মী দিশা রবিকে পর্যন্ত দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করে। আদালতে তা
নিয়ে নাক কাটা গেলেও তাদের লজ্জা নেই।’’