সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
শীর্ষ আদালতের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা তরুণী। আজ সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো এক সবিস্তার বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া সম্বন্ধে তাঁর যথেষ্ট ‘আপত্তি’ রয়েছে। যে ভাবে তদন্ত এগোচ্ছে, তা নিয়ে তিনি যথেষ্ট ‘উদ্বিগ্ন’। তাই এই সিদ্ধান্ত। তদন্ত চালানোর জন্য তৈরি তিন বিচারপতির প্যানেল অবশ্য রাত পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ২২ জন বিচারপতিকে হলফনামা দিয়ে বছর পঁয়ত্রিশের ওই তরুণী অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৮ সালে প্রধান বিচারপতি গগৈ তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন। তখন ওই তরুণী সুপ্রিম কোর্টের জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান বিচারপতি জানান, এর পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বাকি সব বিচারপতির উপস্থিতিতে ঠিক হয়, তিন বিচারপতির একটি প্যানেল এই নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালাবে।
আজকের তারিখ দেওয়া এই বিবৃতিতে মহিলা তদন্ত কমিটি থেকে সরে আসার চারটি কারণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আজ ৩০ এপ্রিল। এই নিয়ে তৃতীয় দিন আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের (মাননীয় বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র) অভ্যন্তরীণ কমিটির সামনে হাজিরা দিলাম। পূর্ণ আস্থা নিয়েই আমি গত ২৬ ও ২৯ এপ্রিল তদন্ত কমিটির সামনে গিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, কমিটি নিরপেক্ষ ও সংবেদনশীল পথে হাঁটবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা এমন যে,
১। আমার শ্রবণশক্তির সমস্যা, উদ্বেগ ও ভয়ের কথা জানানো হলেও শুনানির সময়ে আমার সঙ্গে কোনও আইনজীবী বা বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তিকে রাখতে দেওয়া হচ্ছে না।
২। শুনানির অডিয়ো বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হচ্ছে না।
৩। ২৬ ও ২৯ এপ্রিল আমার বক্তব্য নথিভুক্ত করা হলেও তার কপি আমাকে দেওয়া হয়নি।
৪। তদন্ত প্রক্রিয়া কোন পথে চলবে, আমাকে তা জানানো হয়নি।
এই পরিস্থিতি আমার মনে হয় যে আমি এই কমিটির কাছ থেকে সুবিচার পাব না। তাই আমি এই তদন্ত-প্রক্রিয়ায় আর অংশ নেব না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আজকের বিবৃতিতে মহিলা আরও লিখেছেন, তিন বিচারপতি তাঁকে জানান যে এই তদন্ত ‘ঘরোয়া’ ভাবে চালানো হচ্ছে। মহিলার কথায়, ‘‘২৬ এপ্রিল আমায় কমিটির বিচারপতিরা বলেছিলেন, এটা অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত নয়, আবার বিশাখা নির্দেশিকা মেনে তদন্ত চালানো হচ্ছে না। এই তদন্ত একটা ঘরোয়া প্রক্রিয়া মাত্র।’’ কমিটির শুনানিতে এক জন আইনজীবী সঙ্গে রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তরুণী। সুপ্রিম কোর্টের প্যানেল তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি বলে দাবি মহিলার। তা ছাড়া, শুনানির অডিয়ো বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং করার জন্যও আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আর্জিও মঞ্জুর হয়নি বলে অভিযোগ।
মহিলা বলেন, ‘‘পরের দিন, অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল, আমাকে বার বার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল যে, আমি কেন যৌন হেনস্থার এত দিন পরে অভিযোগ এনেছি। জিজ্ঞাসাবাদের পরিবেশটা খুবই ভীতিজনক ছিল। সুপ্রিম কোর্টের তিন জন বিচারপতি আমাকে এ ভাবে প্রশ্ন করায় এবং আমার সঙ্গে কোনও আইনজীবী বা বন্ধু-স্থানীয় কেউ না থাকার জন্য আমি খুবই বিপন্ন বোধ করছিলাম।’’ মহিলা আরও বলেন, ‘‘প্রথম দিন শুনানির পরে বেরিয়ে দেখি, দু’টো মোটরবাইক আমার গাড়ির পিছু নিয়েছে।’’ মোটরবাইক দু’টির নম্বরের কিছুটা তিনি দেখতে পেয়ে নোট করে রাখেন বলে জানিয়েছেন তরুণী।
মহিলা দাবি করেছেন, তাঁর বয়ানের কোনও কপি তাঁকে দেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার শ্রবণশক্তির সমস্যা রয়েছে। তাই আমার বক্তব্য বলে যা নথিভুক্ত করা হচ্ছিল, তা আমি অনেক সময়েই স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম না। ২৬ ও ২৯ এপ্রিল আমার যে বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে, আজ পর্যন্ত তার কোনও কপি আমাকে দেওয়া হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ এই তদন্ত কমিটি থেকে বেরিয়ে যেতে আমি বাধ্য হচ্ছি কারণ, বর্তমান প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার একটি অভিযোগ সাধারণ কোনও অভিযোগ নয়। এবং সে জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া যে নিরপেক্ষ ও সমভাবপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন, সেটা এই কমিটি বুঝতে পেরেছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমি আশা করেছিলাম, আমার প্রতি কমিটি সংবেদনশীল হবে, এবং এই তদন্তের ফলে আমার ভয়, উদ্বেগ ও মানসিক অসুস্থতা আরও বেড়ে যাবে না।’’