—প্রতীকী চিত্র।
দক্ষিণ চিন সাগরে এত দিন ভারতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘ড্রাগন’কে ঠেকাতে দেখা গিয়েছে তাদের। বিপদে আপদে এতদিন তাদের পাশেই পেয়েছে ভারত। কিন্তু আমেরিকার সেই নৌবাহিনীই এ বার ‘বিনা অনুমতি’তে আরব সাগরে ভারতের ‘নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এ ঢুকে পড়ল বলে অভিযোগ। আমেরিকার নৌবাহিনীর এই পদক্ষেপ ভারতের সামুদ্রিক সুরক্ষা নীতির পরিপন্থী বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। তবে দিল্লির তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, উপকূল থেকে সমুদ্রের ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকা যে কোনও দেশের জলসীমা বলে বিবেচিত হয়। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সমু্দ্র আইন অনুযায়ী, উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকায় অর্থনৈতিক কাজকর্ম চালানোর অধিকার রয়েছে কোনও দেশের, যাকে কি না তাদের ‘নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বলা হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই আইনে সায় দিয়ে যে সমস্ত দেশ স্বাক্ষর করেছে, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে আমেরিকা তাতে স্বাক্ষর করেনি। তাই আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সুরক্ষা আইন অনুযায়ী লক্ষদ্বীপের কাছে টহল দিয়ে তাদের নৌবাহিনী কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করেনি বলে জানিয়েছে তারা।
গত ৭ এপ্রিল আমেরিকার নৌবাহিনীর সপ্তম বহর লক্ষদ্বীপের পশ্চিমে ভারতের ‘নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর ১৩০ নটিক্যাল মাইলে ঢুকে পড়ে। এ নিয়ে তাদের জনসংযোগ বিভাগের (পাবলিক অ্যাফেয়ার্স) তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘৭ এপ্রিল, ২০২১ (স্থানীয় সময়) ইউএসএস জন পল জোন্স জাহাজটি নাব্যিক অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রয়োগ করে লক্ষদ্বীপের পশ্চিমে ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রায় ১৩০ নটিক্যাল মাইল ভিতরে প্রবেশ করে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে এর জন্য আগে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সামরিক মহড়া বা কসরত চালাতে গেলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে এই নিয়ম খাটে না’।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নৌবহর নিয়ে এই ধরনের স্বাধীন অভিযান (ফ্রিডম অব নেভিগেশন অপারেশনশ) চালিয়েই থাকি আমরা। অতীতেও চালিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও চলবে। এটা কোনও একটি দেশের বিষয় নয়। আর এর মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানও প্রকাশ পায় না’।
বিনা অনুমতিতে আমেরিকার নৌবাহিনীর এই অভিযান নিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনী এবং বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকা, ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যে চতুর্দেশীয় বৈঠক হয়েছিল, তাতে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তথা জলভাগে পারস্পরিক সহযোগিতার উপরই জোর দেওয়া হয়েছিল। আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেছিল সব দেশই। মূলত চিনকে ঠেকাতেই এই সমবেত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তার পর দফায় দফায় মহড়াও হয়। কিন্তু আমেরিকার নৌবাহিনীর এই অভিযানের পর সেই অঙ্গীকারই এখন প্রশ্নের মুখে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।