প্রয়াত কংগ্রেস নেতা এন ডি তিওয়ারির পুত্রবধূ অপূর্বা শুক্লা তিওয়ারি। ইনসেটে, তাঁর স্বামী রোহিত। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রয়াত কংগ্রেস নেতা এন ডি তিওয়ারির পুত্র রোহিত শেখর তিওয়ারিকে খুনের অভিযোগে তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত ১৬ এপ্রিল মৃত্যু হয় রোহিতের। হৃদরোগই তাঁর মৃত্যুর কারণ বলে পরিবারের তরফে জানানো হলেও প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহ, মুখে বালিশ চাপা দিয়েই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে রোহিতকে। গ্রেফতারের আগে তিন দিন ধরে রোহিতের স্ত্রী অপূর্বা শুক্লা তিওয়ারিকে জেরা করে পুলিশ। অপূর্বা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়ার পর অপূর্বা স্বীকার করেছেন, তিনিই খুন করেছেন রোহিতকে। কারণ, তাঁর 'দাম্পত্য দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন রোহিত'। এও জানিয়েছেন, খুনের দেড় ঘণ্টার মধ্যেই যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ তিনি মুছে ফেলেছিলেন।
৪০ বছর বয়সী রোহিত গত ১২ এপ্রিল উত্তরাখণ্ডে যান ভোট দিতে। ফিরে আসেন ১৫ এপ্রিল রাতে। দিল্লির ডিফেন্স কলোনির বাড়ির একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই দিন রাতে তাঁকে মদ খেয়ে টলতে টলতে ফিরতে দেখা যায়। তার পরের দিন রোহিতের মা উজ্জ্বলা তিওয়ারি গিয়েছিলেন দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে, তাঁর নিজের চিকিৎসার জন্য। সেই সময়েই বাড়ি থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। সেই ফোনে জানানো হয়, রোহিত খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। তিনি তখন একটি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে রোহিতকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, যখন রোহিতের মাকে হাসপাতালে ফোন করা হয়েছিল, সেই সময় তিওয়ারি বাড়িতেই ছিলেন রোহিতের স্ত্রী অপূর্বা, তাঁর এক তুতো ভাই সিদ্ধার্থ ও পরিচারকরা। হাসপাতালে আনা হলে রোহিতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
গ্রেফতার হওয়ার পর অপূর্বা পুলিশি জেরায় জানিয়েছেন, সারা ক্ষণ মদ খেয়ে থাকতেন রোহিত। তার ফলে, তাঁর দাম্পত্য হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। রোহিতকে খুন করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর। অপূর্বা পুলিশকে বলেছেন, "রোহিত আমার সব আশা, সব স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। সে দিনও ওই ঘটনার আগে আমাদের মধ্যে খুব ঝগড়া হয়েছিল।তখনই আমি ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। খুব মদ খেয়ে থাকায় আমাকে রোখারও ক্ষমতা ছিল না ওর।"
আরও পড়ুন- এন ডি তিওয়ারির সেই ছেলের রহস্যমৃত্যু
আরও পড়ুন- অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষাই কি দায়ী? স্বামী হত্যায় ধৃত অপূর্বার কেরিয়ার কিন্তু হাই প্রোফাইল
বিয়ের অ্যালবাম থেকে
তিনি যে এন ডি তিওয়ারির সন্তান, তার জন্য ৬ বছর ধরে আইনি লড়াই লড়েছিলেন রোহিত। লড়াইয়ে জেতেনও। পিতৃত্বের পরীক্ষার জন্য ২০১২-য় ডিএনএ পরখ করে দেখার প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু এন ডি তিওয়ারি তখন তার জন্য তাঁর রক্ত দিতে অস্বীকার করেছিলেন। পরে অবশ্য তার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন তিনি। ২০১৪-য় আদালত জানায়, রোহিত এন ডি তিওয়ারিরই সন্তান। ওই বছরই এন ডি তিওয়ারি রোহিতের মাকে বিয়ে করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৮৮ বছর। গত বছর তাঁর ৯৩তম জন্মদিনে মৃত্যু হয় এন ডি তিওয়ারির।
ছবি: অপূর্বা শুক্লা তিওয়ারির ফেসবুক পেজের সৌজন্যে