পেট্রল, ডিজেলের দাম প্রায় রোজই বাড়ছে চড়চড়িয়ে। নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে চলেছে পেট্রল আর ডিজেলের দাম।
দামের নিরিখে রবিবার গত চার বছরের মধ্যে রেকর্ড গড়েছিল পেট্রল। ডিজেল গড়েছিল সর্বকালীন রেকর্ড। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দুই তেলের দাম আবার বাড়ল। এবং আবার রেকর্ড গড়ল পেট্রল ও ডিজেল।
কিন্তু কেন প্রায় রোজই বাড়ছে পেট্রল ও ডিজেলের দাম?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়া-কমার উপরেই নির্ভর করে পেট্রল ও ডিজেলের দাম কতটা কী বাড়বে বা কমবে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেক ২০১৬-র মাঝামাঝি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল পড়তির দিকে। ফলে সেই সময় অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও পেট্রল, ডিজেলের দামে প্রায় রোজ এতটা হেরফের ঘটতে দেখা যায়নি। কিন্তু গত বছরের ১ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ফের ঊর্ধ্বমূখী হয় অপরিশোধিত তেলের দাম। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ৪৭ শতাংশ।
এ ছাড়াও পেট্রল ও ডিজেলের দাম বাড়ে মূলত কোন দেশে কী পরিমাণে তার উপর কর ধার্য হচ্ছে, তার উপর। ভারতে সেই কর দু’রকমের হয়। এক, কেন্দ্রীয় সরকারের বসানো আবগারি শুল্ক। আর দুই, রাজ্য সরকারগুলির বসানো ‘ভ্যাট’-এর পরিমাণ।
দাম বাড়ার কারণ শুল্ক, ভ্যাটও
এক লিটার পেট্রল কিনতে যে দাম দিতে হচ্ছে আমাকে, আপনাকে, তার ৪৮.২ শতাংশের জন্যই দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের নেওয়া বিভিন্ন ধরনের কর। আর এক লিটার ডিজেল আমরা যে দামে কিনি, তার ৩৮.৯ শতাংশের জন্য দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের বসানো কর।
আরও পড়ুন- রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়ল তেলের দাম
আরও পড়ুন- রেকর্ড গড়ল ডিজেল, আরও দামি পেট্রল
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম পড়তির দিকে থাকলেও ২০১৪-র নভেম্বর থেকে ২০১৬-র জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ বার সেই আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ওই সময়ের মধ্যে তা কমানো হয়েছিল এক বারই। গত অক্টোবরে। লিটারে ২ টাকা। অথচ ওই সময়ে প্রতি লিটার পেট্রলে বিভিন্ন দরনের শুল্কের পরিমাণ বেড়েছিল ১১ টাকা ৭৭ পয়সা। আর প্রতি লিটার ডিজেলে তা বেড়েছিল ১৩ টাকা ৪৭ পয়সা। যার জেরে শুল্ক বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে যা ছিল ৯০ হাজার কোটি টাকা, তার পরিমাণ ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকায়। পেট্রল, ডিজেলের উপর ‘ভ্যাট’ কমানোর জন্য অবশ্য রাজ্যগুলির কাছে আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু মাত্র ৪টি রাজ্য- মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশ ছাড়া আর কোনও রাজ্যই সে কথায় কর্ণপাত করেনি।
বিদেশের উপর নির্ভরতা বাড়ছে
এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আবার চড়ছে, তাই পেট্রল, ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দরকার ছিল বিদেশের উপর নির্ভরতা কমানো। তেল আমদানি কমানো।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উল্টোটা হয়েছে। ২০১৩-’১৪ সালে দেশে তেলের মোট চাহিদার ৭৭.৩ শতাংশ আমদানি করা হত। আর সেটা ২০১৬-’১৭ সালে বেড়ে হয় ৮১.৭ শতাংশ।
তেল মন্ত্রকের অধীনে থাকা পেট্রলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেলের দেওয়া তথ্য বলছে, তেল আমদানির জন্য খরচের পরিমাণ ১৫ শতাংশ বেড়ে এ বছরের মার্চে হয়েছে ৮ হাজার ১০০ কোটি ডলার।