বর্মার গোপন জবাব ফাঁসে ক্ষোভ

আপনারা শুনানির যোগ্য নন: প্রধান বিচারপতি

গোপন জবাব জমা দেওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু তা আগেই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের তোপের মুখে পড়লেন সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৬
Share:

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।— ফাইল চিত্র।

গোপন জবাব জমা দেওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু তা আগেই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের তোপের মুখে পড়লেন সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা।

Advertisement

তাঁকে ছুটিতে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন অলোক বর্মা। ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি আজ সেই মামলার শুনানি ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। বর্মার আইনজীবী ও অন্যদের রীতিমতো ধমক দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছিলাম, যাতে অফিসারেরা ব্যক্তিগত ভাবে সুরক্ষিত থাকেন। কিন্তু আপনাদের কেউ শুনানির যোগ্যই নন।’’ নিজের নির্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার কারণ আমরা নথিবদ্ধ করতে চাইছি না।’’

সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার সংঘাত প্রকাশ্যে আসার পরে দু’জনকেই ছুটিতে পাঠায় কেন্দ্র। তার বিরুদ্ধেই বর্মা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ১৯ জানুয়ারি অবসর নেবেন। শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় অবসরের আগে মামলার ফয়সালা হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বর্মা। আস্থানাও পাল্টা বর্মার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনকে বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। তদন্ত রিপোর্টে বর্মার সম্পর্কে ‘বিরূপ মত’ থাকায় আদালত বর্মার বক্তব্য জানতে চায়। সোমবার দুপুরে আদালতে জমা হওয়া সেই রিপোর্টই ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার শুনানি শুরু হতেই বর্মার আইনজীবী ফলি এস নরিম্যানের হাতে একটি সংবাদ পোর্টালের রিপোর্ট তুলে দেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘‘বর্মার আইনজীবী হিসেবে নয়, প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে আপনার সাহায্য চাইছি।’’

নরিম্যান নিজেও এ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমের মধ্যে ফারাক রয়েছে। কিন্তু সবাই আশেপাশে খবর জোগাড় করার চেষ্টায় লেগে থাকলে আমরাই বা কী করব?’’ ভিজিল্যান্স কমিশনের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা কিছু বলার চেষ্টা করলেও তাঁকে থামিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।

সোমবার সিবিআইয়ের ডিআইজি মণীশ কুমার সিন্হা মোদী সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি সেই মামলার দ্রুত শুনানিতে রাজি হননি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে মণীশের যাবতীয় অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা গোপনীয়তা বজায় রাখার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ওই মামলাকারী সবাইকে সব জানিয়ে দিয়েছেন। কোনও এক অদ্ভুত কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বাকি সকলে মানছেন না।’’

আজ প্রধান বিচারপতির এজলাসে প্রকৃত পক্ষেই একাধিক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। বর্মার দুই আইনজীবীর মধ্যেই বিবাদ বেধে যায়। সোমবার বর্মার হয়ে আইনজীবী শঙ্করনারায়ণন জবাব পেশ করার জন্য বাড়তি সময় চেয়েছিলেন। আজ নরিম্যান আদালতের মধ্যে অভিযোগ তোলেন, শঙ্করনারায়ণন কারও অনুমতি না নিয়েই বাড়তি সময় চাইতে এসেছিলেন।

মামলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে নরিম্যান ও শঙ্করনারায়ণন এক সঙ্গে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন। আর্জি জানান, তাঁদের কিছু বলার রয়েছে। প্রধান বিচারপতি এ দিনের সব মামলার শুনানির শেষে তাঁদের বক্তব্য শুনতে রাজি হন। এরই মধ্যে যে সংবাদ পোর্টালে বর্মার জবাব ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল, তার সম্পাদক বিবৃতি দিয়ে জানান, তাঁরা শুধুমাত্র সিভিসি-কে পাঠানো বর্মার জবাব প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া জবাবে কী রয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই।

নরিম্যান এটা জানানোর পরে প্রধান বিচারপতি তাঁর হাতে কিছু সংবাদপত্র দিতে যান। কিন্তু দেখা যায়, এজলাসের কোর্টমাস্টার ওই সব কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছেন। তাতেও চটে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এক নম্বর এজলাসে কর্মীদের অপদার্থতা চরমে উঠেছে। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁরা কাগজগুলো সরিয়ে দিয়েছেন।’’ শেষে ওই সব সংবাদপত্র পাওয়া যায় এবং তা নরিম্যানের হাতে তুলে দেন প্রধান বিচারপতি। তাঁকে সেগুলি খুঁটিয়ে দেখতেও বলেন।

এরই মধ্যে আইনজীবী শঙ্করনারায়ণন বলতে যান, তিনি সোমবার যে বাড়তি সময় চেয়েছিলেন, তা মক্কেলের ছাড়পত্র নিয়েই। প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, তিনি কারও কথা শুনতে চান না। শঙ্করনারায়ণন বলেন, তাঁর কাছে মক্কেলের অনুমতি ছিল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তাই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করতে চান।

এতে প্রধান বিচারপতি আরও রেগে যান। তিনি বলেন, ‘‘এটা কি কোনও মঞ্চ যে, এখানে এসে যাঁর যা ইচ্ছে বলবেন? এখানে মানুষ নিজের আইনি অধিকারের জন্য লড়তে আসেন। এই আদালতে কেউ ধোঁয়াশায় নেই যে আমাদের কাছে এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement