কোকেরনাগের জঙ্গলে সেনা অভিযান। ছবি: সংগৃহীত।
রবিবার ভোরেও গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। কিন্তু একটু বেলা গড়াতেই জঙ্গিদের তরফ থেকে কোনও পাল্টা জবাব আসেনি। তা হলে কি সেনার মুহুর্মুহু মর্টার, রকেট লঞ্চার এবং ড্রোন হামলায় মৃত্যু হল জঙ্গিদের? না কি জঙ্গিরা পাহাড় টপকে পালিয়েছে? বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় বলে সেনার এক সূত্রে খবর। জঙ্গিদের বাগে আনতে পাঁচ দিন ধরে লড়াই চালাচ্ছে সেনা। নামাতে হয়েছে প্যারা কম্যান্ডোও।
শনিবারেও ঘন ঘন হামলা চালিয়েছে সেনা। জঙ্গিরা যে পাহাড়ি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে মর্টার এবং রকেট লঞ্চার দিয়ে মুহুর্মুহু হামলা চালায় সেনা। জঙ্গিরাও পাল্টা গুলি চালাচ্ছিল। রবিবার ভোরেও গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। কিন্তু তার পর থেকে জঙ্গিদের তরফে আর কোনও জবাব আসেনি। কোকেরনাগের জঙ্গল ঘিরে ফেলে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে সেনা। কেন এত দিন ধরে এই লড়াই চলছে?
সেনা সূত্রে খবর, বেশ কয়েকটি কারণে এই অভিযানে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সেনাদের। যে জঙ্গলে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে, তা অত্যন্ত ঘন। তা ছাড়া জঙ্গিরা পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়ায় সেনার কাছে এই চ্যালেঞ্জ আর বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, পাহাড়ি এবং দুর্গম অঞ্চলে লড়াই করার জন্য এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, তারা অনেক দিন আগেই ওই পাহাড়ে ডেরা বানিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ যে গুহায় তারা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালানোর রসদও মজুত করা হয়েছে বলে সেনা মনে করছে। পরিকল্পনা করেই জঙ্গিরা গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। যাতে সেনাকে ফাঁদে ফেলে হামলা চালানো যায়।
তা ছাড়া যে জঙ্গল এবং পাহাড়ি এলাকায় লড়াই চলছে, সেটি অত্যন্ত দুর্গম। খাড়াই পাহাড়। তার সঙ্গে ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ায়, পাহাড়ি রাস্তা পিছল হয়ে যাওয়ায় অভিযানে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রোনের সাহায্যে জঙ্গিদের চিহ্নিত করতে পারলেও দ্রুত সেই জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না। আর এই বৃষ্টির কারণেও দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় ড্রোন দিয়ে হামলা চালাতেও সমস্যা হচ্ছিল। জঙ্গিরা পাহাড়ে উঁচু জায়গায় থাকায় সেনার সমস্ত গতিবিধি দেখতে পাচ্ছিল। ফলে তাদের পক্ষে হামলা চালানো আরও সহজ হচ্ছিল। গারুলের যে পাহাড়ি জঙ্গলে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে, সেটি কৌশলগত ভাবে জঙ্গিদের কাছে সহযোগী হয়েছে। এক দিকে ঘন জঙ্গল, অন্য দিকে গভীর খাদ, ফলে খুব সন্তর্পণে এগোতে হয়েছে সেনাকে। যে পাহাড়ে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে, সেটি আবার পীর পঞ্জল রেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে জঙ্গিরা এমন একটি জায়গাকে হামলার জন্য বেছেছে, যাতে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে। শনিবার থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় অভিযান বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আর তার সুযোগ নিয়েছে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের ডেরা লক্ষ্য করে মর্টার হামলাও চালানো হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে তা-ও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আর সব মিলিয়ে এই অভিযান সেনার চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়েছে। যার জেরে লড়াই দীর্ঘতর হয়েছে বলে সেনার এক সূত্রের দাবি।