রঘুরাম রাজনের বিদায়ে শেয়ার বাজারে সোমবার কেমন ধাক্কা লাগবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণের মধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর কে হবেন, তা নিয়ে শিল্পমহল ও লগ্নিকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে।
অরুণ জেটলি গত কালই জানিয়ে দিয়েছিলেন, রঘুরাম রাজনের উত্তরসূরির নাম খুব শীঘ্রই ঘোষণা হবে। মোদী সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের মতে, এই পদের দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে আছেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সনকে পছন্দ করেন।
অরুন্ধতীর পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর উর্জিত পটেল, প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর সুবীর গোকর্ণ, অর্থনীতিবিদ রাকেশ মোহন, সেবি-র চেয়ারম্যান ইউ কে সিন্হার নামও রয়েছে। পরিচিত এই সব নামের পাশেই উঠে আসছে ডি রাজাগোপালনের মতো অপরিচিত নামও। রাজাগোপালন অতীতে গুজরাতের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব পদে কাজ করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারি আমলাদের একটা বড় অংশই মনে করেছেন, রঘুরাম রাজনের মতো ‘হাই-প্রোফাইল’ অর্থনীতিবিদদের বদলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের বদলে অপরিচিত বা অখ্যাত মুখ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, সরকারের একটা অংশের মত হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হয়ে সুদ নীতি ঠিক করতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রাক্তন আমলা, পেশাদার অর্থনীতিবিদরাই সেই কাজ সামলে দিতে পারেন। তাঁদের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে অন্তত নিশ্চিত থাকা যায় যে, তাঁরা সব বিষয়ে মুখ খুলবেন না।
নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, অসহিষ্ণুতা বিতর্ক থেকে আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত সত্যিই বিশ্বসেরা কি না— এ সব বিষয়ে মুখ খুলে রঘুরাম রাজন বিজেপি-আরএসএসের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। নির্মলা সীতারমন থেকে পীযূষ গয়ালের মতো মন্ত্রীদেরও তাঁর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। অনেকেই মনে করছিলেন, রঘুরাম নিজের গণ্ডি ছাড়াচ্ছেন। অর্থনীতিবিদের বদলে এক জন প্রাক্তন আমলা বা পেশাদারকে এই পদে বসালে তাঁর থেকে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা তুলনায় কম। নিজের লক্ষ্মণরেখার মধ্যে থাকার বিষয়ে তিনি অনেক বেশি থাকবেন।
রাজনের উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের মেয়াদ অন্তত পাঁচ বছর করার দাবি উঠেছে। নতুন গভর্নরের দৌড়ে থাকা অর্থনীতিবিদ রাকেশ মোহনই সেই দাবি তুলে যুক্তি দিয়েছেন, ওই পদে স্থায়িত্বের প্রয়োজন। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের অন্তত পাঁচ বছর সময় দেওয়া উচিত। যাতে তাঁরা সংস্কারের কাজ ঠিক মতো করতে পারেন। বিদেশের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কেও গভর্নরের মেয়াদ ৫ থেকে ৭ বছর হয় বলে রাকেশ মোহনের যুক্তি।
রাজনের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ঋণ নীতি কমিটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে এই ঋণ নীতি কমিটি নিয়ে রাজনের ক্ষমতার লড়াই হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রক কার্যত ঋণ নীতি তৈরির ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। রাজনের দাবিতে তিন জন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, তিন জন সরকারের সদস্যকে নিয়ে মোট ছ’জনের কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সেখানেও গভর্নরের হাতে চূড়ান্ত ভোটদানের ক্ষমতা ছিল। রাকেশ মোহন অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, কমিটির বিষয়ে যেমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তেমনই থাকবে।