রাবণপোড়ার বাজির শব্দে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ট্রেনের হর্ন। সতর্ক ছিলেন না লেভেল ক্রসিংয়ের কর্মীও। শেষ মুহূর্তে ট্রেনচালকও গতি কমাতে পারেননি। উদ্যোক্তারাও কোনও ভাবে সতর্ক ছিলেন না। অমৃতসরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে উঠে আসছে এমনই একাধিক কারণ। যার জেরে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৬০ জনের।
দুর্ঘটনার পর থেকেই শোকে থমথমে গোটা এলাকা। ৬০ জনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৯টি দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। অধিকাংশ দেহই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাই শনাক্ত করতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
রেললাইনের উপর থাকা অধিকাংশ মানুষই মোবাইলে রাবণপোড়ার ছবি তুলছিলেন। ফলে তাঁদের নজর এবং মনোযোগ সেদিকেই ছিল। লাইনে ট্রেন আসতে পারে, এটা কারওমাথায় ছিল না।
পেল্লাই আকারের রাবণ যখন পোড়ানো শেষ হয়, তখন তা নীচে ভেঙে পড়ে। তাছাড়া প্রচুর বাজি ফাটায় আগুনের ফুলকি ছিটকে আসছিল। তা থেকে বাঁচতেও অনেকে রেললাইনে উঠে পড়েন।
সবার নজর ছিল হয় জলন্ত রাবণের দিকে, নয়তো মোবাইলের স্ক্রিনে। তাই আচমকা ট্রেন চলে আসায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সকলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিষে দিয়ে চলে যায় ট্রেন।
দুর্ঘটনাস্থলের ৩০০ মিটার দূরেই রয়েছে একটি লেভেল ক্রসিং। ট্রেন যাতায়াতের সময় রেলকর্মীরা চালককে সবুজ সঙ্কেত দেন। সামনেররেললাইনে কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকলে চালককে সতর্ক করার সিগন্যালও দেওয়া হয়। লেভেল ক্রসিং থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ট্রেন ছুটেছিল। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের এত কাছে লাইনের উপর এত মানুষ থাকলেও সেখানকার কর্মীরা কেন চালককে সতর্কবার্তা দিলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দুর্ঘটনার পর লুধিয়ানা স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনোর পরই চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পঞ্জাব পুলিশের কর্তারা। চালক জানিয়েছেন, তাঁকে ‘অল ক্লিয়ার’ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। লাইনের উপর এত লোক দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তা ভাবতেই পারেননি তিনি। যখন কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন আর ব্রেক কষে দাঁড় করানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না বলে তিনি দাবি করেছেন।
রেললাইনের ধার বরাবর অনেক সময় লাইনম্যানরা থাকেন। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে তাঁদের কেউ ছিলেন কি না তা জানা যায়নি। লাইনের উপর এবং আশেপাশে প্রায় ৭০০ লোক জড়ো হয়েছিলেন, তার খবর চালক বা লেভেল ক্রসিংয়ের কর্মীর কাছে তাঁরাও কেন দিতে পারেননি, উঠছে সে প্রশ্ন।
রাবণপোড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা কাউন্সিলরের ছেলে সৌরভ মিঠু মদান। এর আগে ওই এলাকায় কখনও রাবণ পোড়ানোর অনুষ্ঠান হয়নি। রেললাইনের এত কাছে হলেও উদ্যোক্তাদের তরফে আগত মানুষজনকে সতর্ক করা হয়নি বলেও অভিযোগ। যদিও পঞ্জাবের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী নভজ্যোৎ কউর জানিয়েছেন, প্রতি বছরই ওখানে রাবণ দহন অনুষ্ঠান হয়।
রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি জানিয়েছেন, রেল লাইনের এত কাছে অনুষ্ঠান হলেও তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। ফলে রেলকর্মীদের কাছে কোনও বার্তা ছিল না।
অনুষ্ঠানের অনুমতি কি নেওয়া হয়েছিল? নাকি কাউন্সিলরের ছেলের অনুষ্ঠান বলে সেসবের প্রয়োজন পড়েনি? রেললাইনের ধার ঘেঁষে রাবণপোড়ার মতো একটা অনুষ্ঠানের কেন অনুমতি দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।