কে হতে পারেন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা? (বাঁ দিক থেকে) গীতা গোপীনাথ, পামি দুয়া এবং পুনম গুপ্ত। ফাইল চিত্র
রাষ্ট্রপতি ভবনে চলে যাওয়ার আগে সেটাই ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শেষ বাজেট। ২০১২ সালের কথা। বাজেটের প্রস্তুতি চলছে। কৌশিক বসু সে সময় মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। স্বভাবতই তাঁর নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। প্রতি দিনই ভোরবেলা অফিসে ঢোকেন। গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন। সেই সময়ে তাঁর দিল্লির বাড়িতে এক জন নতুন পরিচারিকা এসেছিলেন। কৌশিকবাবুর স্ত্রী তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কি জানো, দাদাবাবু কী কাজ করেন?’ এক মুহূর্তও না ভেবে মহিলা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘জানি তো! উনি জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর কাজ করেন।’
এই ‘জিনিসপত্রর দাম বাড়ানো’-র কাজ অবশ্য এ দেশে কখনও কোনও মহিলাকে দেওয়া হয়নি। কোনও মহিলা কখনও মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা হননি।
মোদী জমানাতেই একাধিক মহিলা অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। অর্থনীতিবিদ ইলা পট্টনায়ক দাপটের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকে কাজ করেছেন। তবে প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে। যদিও রঘুরাম রাজনের বিদায়ের পরে সে সময় মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে কেউ ছিলেন না। ফলে আর্থিক উপদেষ্টার দফতরের ‘নম্বর টু’ হিসেবে ইলাই ছিলেন সর্বেসর্বা। কিন্তু তাঁকে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা করা হয়নি।
এ বার কি সেই খরা কাটবে? মহিলা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কি কোনও মহিলাকেও মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে দেখা যাবে?
বছর তিনেক আগে যখন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদ থেকে বিদায় নিলেন, সে সময়ও এমন জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। ভেসে উঠেছিল পুনম গুপ্তর নাম। তিনি তখন বিশ্ব ব্যাঙ্কে ভারতের প্রধান অর্থনীতিবিদ। কিন্তু অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনমের বদলে আর এক সুব্রহ্মণ্যম, কৃষ্ণমূর্তি ওই পদে আসেন। এ বার কৃষ্ণমূর্তি বিদায় নিচ্ছেন। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার জল্পনায় উঠে আসছে একাধিক মহিলার নাম। পুনম গুপ্তর নাম এ বারও চর্চায়। তিনি এখন ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চের ডিরেক্টর জেনারেল। জল্পনায় রয়েছেন পামি দুয়া। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক। এবং অবশ্যই গীতা গোপীনাথ। ২০২২-এর জানুয়ারিতেই তিনি আইএমএফ-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদের পদ ছেড়ে দেবেন। তারপরে কি নর্থ ব্লক? গীতার ক্ষেত্রে অবশ্য বাধা হতে পারে তাঁর আমেরিকার পাসপোর্ট।
হতে পারে, এঁদের কেউই শেষ পর্যন্ত হলেন না। বর্তমানে প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যান্যালকেই মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা করে দেওয়া হল। তা হলে কৌশিক বসুর পরে ফের আর এক বঙ্গসন্তানের কাঁধেই ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো’-র দায়িত্ব বর্তাবে।