ঘন ঘন গুজরাত সফর। আর যত বার সফর, তত বার মন্দির দর্শন।
গুজরাতেই নরেন্দ্র মোদীর পালের হাওয়া কাড়তে রাহুল গাঁধীর এই নয়া কৌশল শুধুই কটাক্ষ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে সামলাতে পারছে না বিজেপি। ঘরে-ঘরে ছুটছেন অমিত শাহ থেকে নির্মলা সীতারামনরা। মোদীও ছুটছেন গুজরাতে। শুধু তা-ই নয়, রাহুলের ‘নরম হিন্দুত্বে’র কৌশল মোকাবিলায় এখন আসরে নামতে হচ্ছে আরএসএসকেও। সঙ্ঘের ‘মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’ স্থির করেছে, রাহুলের মন্দির-যাত্রার মোকাবিলায় তারা যাবে মসজিদ আর দরগায়। বোঝাবে, কংগ্রেস বিশ্বাসঘাতক, মুসলিমরা লাভবান হয়েছেন মোদীর আমলেই।
আরও পড়ুন: ‘পিডি’ নয়, আমিই করি রাজনীতির টুইট: রাহুল
গুজরাতে ভোটের উত্তাপ যখন থেকে বাড়তে শুরু করেছে তখন থেকেই রাহুল মোদী-রাজ্যে সফর বাড়িয়ে দিয়েছেন। জনমত সমীক্ষায় রাহুলের এই প্রচারের ‘ফল’ও মিলতে শুরু করেছে। মাত্র দু’মাসের মধ্যে বিজেপির ভোটে থাবা বসিয়ে রাহুল কংগ্রেসের আসন বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে নিয়েছেন। তিন তরুণ নেতাকে নিয়ে পাতিদার, ওবিসি, দলিত, আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ককে একজোট করার চেষ্টা সঙ্গে সমানে চলছে মন্দির-দর্শন। এ ভাবেই সামগ্রিক ভাবে হিন্দু ভোটকে ঝুলিতে পুরতে চান কংগ্রেস সহ-সভাপতি।
গোড়ার দিকে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরের মঞ্চ থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ব্যঙ্গ করতেন, ‘‘রাহুল আরতিই করতে জানেন না।’’ স্মৃতি ইরানি থেকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রীরাও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘শুধু ভোটের সময় মন্দির কেন?’’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু যাবতীয় বিরোধিতা, কটাক্ষ উপেক্ষা করেই রাহুল নিজের লক্ষ্যে অবিচল। গত কালও গিয়েছেন অক্ষরধাম মন্দিরে। যার ভক্তকুল মূলত পাতিদাররা। পরে যান বনাসকান্ঠার অম্বাজি মন্দিরেও।
এই অবস্থায় মোদীর ঝুলি থেকে হিন্দু ভোট কংগ্রেসের দিকে যাওয়া রুখতে বিজেপি-সঙ্ঘের নতুন চাল, সংখ্যালঘুদের কাছে গিয়ে রাহুলের ‘মুখোশ’ খোলা। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘আসলে কংগ্রেস মনে করে সংখ্যালঘু ভোট তাদের মুঠোয়। তাই হিন্দু ভোটকে কব্জা করতে নেমেছে তারা। কিন্তু গুজরাতের জনতার আস্থা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর উপরে। এ বার সংখ্যালঘুদের কাছেও রাহুল গাঁধীর মুখোশ খোলা হবে।’’
সেই সূত্রে ধরেই আরএসএসের সংখ্যালঘু শাখা গুজরাতের মসজিদ ও দরগায় গিয়ে পাল্টা প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সঙ্ঘের ‘মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক মহম্মদ আফজলের মতে, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতার নামে কংগ্রেস আসলে রাজনীতি করছে। তাই মসজিদ ও দরগায় গিয়ে বোঝানো হবে, কংগ্রেস কী ভাবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। রাহুল গাঁধী মনে করেন, সংখ্যালঘু ভোটে তাদের একচেটিয়া অধিকার। কিন্তু রাজ্যের সংখ্যালঘুরা জানেন, বিজেপির আমলেই তাঁরা লাভবান হয়েছেন।’’
কিন্তু কংগ্রেস বলছে, আসলে ভয় পেয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। নিজেদের ভয় ঢাকতে উল্টে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তাতেও কোনও ফল হবে না। রাহুল গাঁধী গুজরাতে দাঁড়িয়েই আজ বলেন, ‘‘বিজেপি উপরে কার্পেট বম্বিং করছে, কিন্তু নীচে চোরাস্রোত বইছে।
উপরে নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার, আর নীচে সুনামি। ডিসেম্বরেই টের পাবে বিজেপি।’’