রঞ্জন গগৈ
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথগ্রহণের আগেই বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বুঝিয়ে দিলেন, তিনি কোন পথে চলবেন।
বুধবার নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। তার আগে সোমবার বিদায়ী প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি গগৈয়ের মন্তব্য, ‘‘দেশ জুড়ে চরম রাজনৈতিক মন্থনের মধ্যে বাস করছি আমরা। জাতপাত, ধর্মবিশ্বাসের নিরিখে আমরা এখন বিভাজিত। আমরা কী খাব, কী পড়ব, তা এখন ছোটখাটো বিষয় নেই। এইসব অভ্যাস, তার ফারাকের ভিত্তিতেই আমরা একে অপরকে ঘৃণা করছি।’’ এই প্রেক্ষিতে তিনি সংবিধান মেনেই ন্যায়ের পথে হাঁটবেন বলে বার্তা দিয়েছেন বিচারপতি গগৈ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যখনই কোনও সংশয় হবে, সংবিধানের নৈতিকতাই শেষ কথা বলবে।’’
বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-সহ প্রবীণ বিচারপতিরাই বিদায়ী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বজায় থাকছে কি না। আজ বিদায়ী প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের বিদায় সংবর্ধনায় বলেন, ‘‘বিচারের স্বাধীনতা সব সময়েই বহাল থাকবে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে প্রবীণ বিচারপতিরা মুখ খোলায় সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষস্তরে ফাটলও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। আজ প্রধান বিচারপতি মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘বিচারপতিদের মধ্যে সব সময়ে সহকর্মীর সম্পর্ক ছিল ও রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: মোদীর ‘গুরু’কে ছাড়, মামলা তুলল মহারাষ্ট্র
বিচারপতি গগৈ আজ প্রধান বিচাকপতি মিশ্রের প্রশংসাই করেছেন। যুক্তি দিয়েছেন, ৩৭৭ ধারা খারিজ, ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার মতো একের পর এক মামলায় প্রধান বিচারপতি মিশ্র নাগরিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তা শুনে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিদায় সংবর্ধনায় ভালো ভালো কথা বলাটাই রীতি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, সৌজন্যের খাতিরে নয়। প্রকৃত ভালোবাসা থেকেই এই কথাগুলি বলা হচ্ছে।’’
বিদায়ী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাবও এসেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল ছিল, তিনি আজকের অনুষ্ঠানে মুখ খুলবেন কি না। তাই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভিড় উপচে পড়েছিল। প্রধান বিচারপতি তা নিয়ে মুখ না খুললেও স্বভাবসিদ্ধ রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘কখনও যদি আত্মজীবনী লিখি, তার নাম হবে ‘নো রেটোরিকস’।’’
গত কাল বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ দিন লড়াই করেছেন। আমাদের আশা, প্রাক্তন বিচারপতি জে চেলামেশ্বরের মতো তিনিও অবসরের পরে কোনও সরকারি পদ গ্রহণ করবেন না।’’ অবসরের পরে প্রধান বিচারপতি মিশ্রকে লোকপালের পদে নিয়োগ করা হতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের। আজ প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিংহের মতো প্রবীণ আইনজীবীরা জানান, অবসরের পরে সরকারি পদ না নেওয়ার কারণ নেই।
আজ এজলাসে শেষ দিনে বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গেই বসেছিলেন প্রধান বিচারপতি। এক আইনজীবী মামলার শেষে ‘তুম জিও হাজারো সাল’ বলে গান করতে শুরু করলেই প্রধান বিচারপতি তাঁকে থামিয়ে দেন।