এই হারাধনের মাত্র ছ’টি ছেলে। আর ওই ছ’জনকে সামলাতেই রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা তাঁর। ইনি অরবিন্দ কেজরীবাল। কেন এত সমস্যা হচ্ছে তা জানতে এ বার বৈঠক করার কথা ভাবছেন তিনি।
মাত্র দেড় বছর আগে স্বচ্ছ রাজনীতি উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছিল অরবিন্দ কেজরীবালের আপ। কিন্তু দুর্নীতি, যৌন কেলেঙ্কারি-সহ নানা কাণ্ডের জেরে ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভা থেকে খসে গিয়েছেন তিন-তিন জন মন্ত্রী। এক জন শিক্ষাগত যোগ্যতা জাল করার জন্য জেলে বন্দি। এক জন আবার আর্থিক দুর্নীতি করতে গিয়ে ডুবেছেন। আর তৃতীয় জন ফেঁসেছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে। অর্থাৎ ছ’জনের যে মন্ত্রিসভা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তার তিন সদস্যকেই সরাতে হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে আরও এক মন্ত্রীর মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিশ্চিত হলেও, বয়স ও পদমর্যাদার কারণে রেহাই পেয়ে যান তিনি। তবে পাল্টে দেওয়া হয় তাঁর দফতর। শুধু মন্ত্রীরাই নন, আর্থিক কেলেঙ্কারি, মারধর, জালিয়াতির কারণে অন্তত জনা সাতেক আপ বিধায়ক এখন তিহাড় জেলে পচছেন। আর যত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ততই যে পঞ্জাবে সরকার গড়ার সম্ভাবনা কমে আসছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে আপ শিবির।
নির্বাচনের আগে কেজরীবাল দাবি করেছিলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও অতীত ইতিহাস সাফ-সুতরা থাকলে তবে টিকিট পাবেন দলের প্রার্থীরা। এক দুর্নীতিমুক্ত, কলঙ্কহীন সরকার উপহার দেওয়ার আশা জাগিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন কেজরীবাল। কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত সরকার যে সোনার পাথরবাটি তা শুরুতেই বুঝে যান তিনি। ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যেই জাল শংসাপত্র দিয়ে আইনের ডিগ্রি নেওয়ার অপরাধে প্রথমে পালিয়ে বেড়িয়ে পরে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন খোদ আইনমন্ত্রী জিতেন্দ্র তোমর। গত বছরের শেষ দিকে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিসভার এক মাত্র মুসলিম সদস্য তথা পরিবেশ মন্ত্রী আসিম আহমেদ খানকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন কেজরীবাল। আর সব শেষে গত কাল যৌন কেলেঙ্কারির কারণে সরে যেতে হয় শিশু ও নারীকল্যাণ মন্ত্রী সন্দীপ কুমারকে। আজ আবার সন্দীপ দাবি করেছেন, তিনি দলিত। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর মাঝে গোপাল রাইকে পরিবহণ দফতর থেকে সরিয়ে অন্য দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, গোপালের স্বাস্থ্যের কারণে তাঁকে সরানো হয়েছে। কিন্তু সূত্রের খবর, অটো-বাসের পারমিট দেওয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে সরাতে বাধ্য হন কেজরীবাল।
এর মধ্যেই দলীয় সমীক্ষা বলছে, ক্রমশ দিল্লিতে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে আপ। সরকারের কাজকর্মেও বিশেষ সন্তুষ্ট নয় দিল্লিবাসী। যে ভাবে চলতি বর্ষায় গোটা দিল্লিতে জল জমেছে তা কিছুটা অভূতপূর্ব। প্রকাশ্যে তার দায় বিজেপি শাসিত পুরসভার ঘাড়ে ঠেলেছে আপ। কিন্তু জল জমার দায় একেবারে এড়াতে পারছে না আপ শিবির।
দিল্লির পরিবহণ সমস্যা বা সড়কের হাল ফেরাতেও চূড়ান্ত ব্যর্থ আপ সরকার। যানজট সমস্যা মোকাবিলায় বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি এই সরকার। আইন-শৃঙ্খলাও তথৈবচ। একই সঙ্গে যে ভাবে ছোটখাটো বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আপ সরকার সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে তাও বিশেষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না রাজধানীর মানুষ। এ যাবৎ কেজরীবাল নিজেদের ব্যর্থতার সব দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলার রাজনীতি করেছেন। কিন্তু দল বুঝতে পারছে ক্রমশ সেই তত্ত্বেও একপেশে হয়ে পড়েছে। যে কারণে এ যাত্রায় যৌন কেলেঙ্কারির পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে সরব হতে দেখা যায়নি কেজরীবালকে। উল্টে দায় ঠেলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আপ নেতার উপরেই। কেজরীবালের কথায়, ‘‘দোষী প্রমাণ হতেই আধ ঘণ্টার মধ্যে আমরা সন্দীপকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’’ দল মনে করছে, সব কিছুর দায় অন্যের ঘাড়ে ঠেলায় হিতে বিপরীত হচ্ছে। জনমানসে ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে দলের।
ঘরোয়া ভাবে আপ শীর্ষ নেতৃত্ব স্বীকার করছেন, দলের নেতারাই মুখ পোড়াচ্ছেন। তাঁদের কারণেই বিরোধীরা মুখ খোলার সুযোগ পাচ্ছেন। কেজরীবাল যে ক্ষুব্ধ তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের কথায়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছে, একের পর এক ঘটনায় দলীয় নেতারা ফেঁসে যাওযায় কেজরীবাল মনে করছেন আদর্শের প্রশ্নে কোথাও বিচ্যুতি ঘটেছে। দলের নিচুতলায় রাশ আলগা হচ্ছে বুঝতে পেরে এখন লাগাম কষতে অবিলম্বে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে চিন্তন বৈঠকে বসার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করছেন কেজরীবাল।