নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতে একটু বাড়াবাড়ি রকমের গণতন্ত্র রয়েছে বলে মনে করেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। শুধু মনে করেন না, সংস্কারের পথে বাধা প্রসঙ্গে তিনি আজ প্রকাশ্যেই বলেছেন, “এ দেশে খুবই বেশি গণতন্ত্র রয়েছে।”
কৃষি ক্ষেত্র সংস্কারে তিনটি কৃষি আইন চালু করে চাপে পড়েছে মোদী সরকার। ওই তিন আইনের বিরুদ্ধে ভারত বন্ধ আজ অনেক জায়গাতেই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আন্দোলনে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে অ-বিজেপি দলগুলি। এই পরিস্থিতিতে কান্তের এই মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক তৈরি করেছে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেতের মন্তব্য, “খুব বেশি গণতন্ত্র বলে কিছু হয় না। যে কোনও মূল্যে ও সর্বশক্তি দিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে আমাদের।” বিজেপির প্রাক্তন শরিক শিবসেনার তরফে প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর আবার দাবি, “খুব বেশি গণতন্ত্র কখনওই খুব খারাপ নয়।” শিবসেনার মতে নীতি প্রণয়নে যত বেশি সংশ্লিষ্ট পক্ষ যুক্ত হয়, ততই ভাল। তাতে সকলের জন্য উন্নয়নশীল নীতি তৈরি করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: চাষিদের পাশে ভিন্ মুলুক, অস্বস্তি দিল্লির
আরও পড়ুন: বৈঠক নয়, আজ আবার প্রস্তাব, অমিত-কথাতেও অটল কৃষকেরা
এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নীতি আয়োগের প্রধান কান্ত আজ সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে চিন সরকারের অবাধ ক্ষমতার তুলনা টানেন। তাঁর কথায়, “চিনে সম্ভব হলেও, ভারতে কঠোর সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করা খুবই কঠিন।” তাঁর মতে, কঠোর সংস্কার ঘটাতে রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকাটা জরুরি। খনি, কয়লা, শ্রম ও কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কার ঘটিয়ে মোদী সরকার সেই রাজনৈতিক ইচ্ছাটা দেখিয়েছে। কারণ, কড়া সংস্কার ছাড়া চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টেকা সহজ নয়। তাঁর কথায়, “সংস্কারের পরবর্তী ঢেউটি রাজ্যগুলি থেকে উঠে আসা প্রয়োজন। ১০-১২টি রাজ্যে যদি উঁচু হারে বৃদ্ধি ঘটতে পারে তবে গোটা দেশে তা সম্ভব না-হওয়ার কোনও কারণ নেই। সস্তায় বিজলি পেতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির মধ্যে আরও প্রতিযোগিতা দরকার। সে জন্য কেন্দ্রশাসিত এলাকাগুলিতে বণ্টন সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ করতে বলেছি আমরা।
আন্দোলনরত কৃষকরা দাবি করে আসছেন, চাষিদের কাছে থেকে বেসরকারি তথা কর্পোরেট সংস্থাগুলির ফসল কেনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-এর বিষয়টি আইনেই বেঁধে দেওয়া হোক। নীতি আয়োগের সিইও বলেন, “এটা বোঝা জরুরি যে, এমএসপি থাকবে, মন্ডীও থাকবে। তবে চাষিদের হাতে অবশ্যই পণ্য বিক্রি করার একাধিক বিকল্প থাকতে হবে। তাতেই তাঁদের লাভ।” বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিতে লাগে লিথিয়াম। তার সরবরাহ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কান্তের আশ্বাস, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর লিথিয়াম রয়েছে।
মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার ডাক প্রসঙ্গে কান্তের ব্যাখ্যা, এটি আদৌ বিশ্ব থেকে নজর ফিরিয়ে নেওয়া নয়। বরং এটি ভারতীয় সংস্থাগুলির সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলে দেওয়া। সরকার এত দিন ৯০ শতাংশ পণ্যে ও ৮৬ শতাংশ রফতানিকারীকে সহায়তা জুগিয়ে এসেছে। কিন্তু এ বার এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে ভারতীয় সংস্থাগুলি বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।