—প্রতীকী চিত্র।
দিন কয়েক আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিল, দ্রুত গতিতে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’ (এএমআর) তৈরি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ দিচ্ছে না, এমন প্রাণঘাতী ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এ বার সেই একই সতর্কবার্তা মিলল একটি ভারতীয় গবেষণাপত্রে। ‘ল্যানসেট রিজিওনাল হেল্থ— সাউথইস্ট এশিয়া’ নামে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। তাতে বলা হয়েছে, এমনিতেই নতুন ওষুধের অভাব, তার মধ্যে পুরনো অ্যান্টিবায়োটিকগুলিও আর কাজ দিচ্ছে না। পরিস্থিতি জটিল।
ভারতীয় গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর এএমআর সার্ভেল্যান্স নেটওয়ার্ক-এর ২১টি কেন্দ্র থেকে ছ’বছরের তথ্য সংগ্রহ করে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স (এএমআর) বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ওষুধ যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও অন্যান্য পরজীবীর সংক্রমণ কমাতে আর কাজ দেয় না, সেই পরিস্থিতিকে বলে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’। এতে রোগীর সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকে, মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ‘ইমার্জিং ট্রেন্ডস ইন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স ইন ব্লাডস্ট্রিম ইনফেকশনস: মাল্টিসেন্ট্রিক লংগিচুডিনাল স্টাডি ইন ইন্ডিয়া (২০১৭-২০২২)’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন আইআইটি দিল্লি ও আইসিএমআর-এর গবেষকেরা। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘প্রায় অতিমারি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এএমআর, গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এই গবেষণায় দেশে রোগীদের রক্তের সংক্রমণে কী ভাবে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, চিকিৎসার কৌশল সন্ধান।’
গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইিপেনেম ও মেরোপেনেম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে মাসে মাসে এএমআর বাড়ছে। ক্লেবসিয়েল্লা, ই কোলাই, অ্যাসিনেটোব্যাকটর-এর মতো ব্যাকটিরিয়ার রক্তে সংক্রমণ ঘটলে, তার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ওই দু’টি ওষুধ। ক্লেবসিয়েল্লা ও অ্যাসিনোব্যাকটর ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণে দেখা গিয়েছে, হাসপাতাল থেকে রোগী সংক্রমিত হলে, তাতে এএমআর আরও বেশি হচ্ছে। আবার ই কোলাই এবং ক্লেবসিয়েল্লা, এই দুই ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত ওষুধ সেফালোস্পোরিনস ও ফ্লোরোকুইনোলোনস কাজ দিচ্ছে না।
গবেষণায় শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে ৪.৯৫ শতাংশ মৃত্যু হয়েছিল এএমআর-এ। এই ভাবে চললে ২০৫০ সালে পৌঁছে প্রতি বছর অন্তত ১ কোটি মানুষ মারা যাবেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কম ও মাঝারি আয়ের দেশগুলি। গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, এএমআর-এর জেরে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) ধাক্কা খাবে। যার ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্রে পৌঁছবে। এএমআর-এ যে দেশগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে রয়েছে ভারতও। গবেষকেরা বলছেন, ‘‘এএমআর নিয়ন্ত্রণ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই খাতে আরও অর্থবরাদ্দ দরকার। কার্যকরী নীতি গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।’’