—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নয়াদিল্লি, ৩ এপ্রিল: জাতীয় স্বার্থে এবং সার্বিক ভাবে মুসলিম সমাজের উন্নয়নের স্বার্থে সংশোধিত ওয়াকফ বিল আনা হচ্ছে বলে আজ রাজ্যসভায় দাবি করল শাসক শিবির। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, এই বিল অসাংবিধানিক। শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা সঞ্জয় রাউত শাসককে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আপনারা আবার কবে থেকে মুসলিমদের জন্য চিন্তিত হলেন?...আসলে চিন্তা এদের সম্পত্তি নিয়ে।’’ শেষ অবধি রাত দুটোয় রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে যায় ওয়াকফ বিল। সরকার পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি, বিপক্ষে ৯২টি।
গত কাল প্রায় মাঝরাতে লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাশ হওয়ার পরে আজ রাজ্যসভায় বেলা একটা থেকে আলোচনা শুরু হয়। বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু দাবি করেন, নতুন আইন আনার লক্ষ্যই হল ওয়াকফের মাধ্যমে যে আয় হবে, তা দিয়ে গরিব, অনাথ ও মুসলিম মহিলাদের উন্নয়ন। বিশেষ করে যাঁরা বিধবা বা স্বামীবিচ্ছিন্না, তাঁরা যাতে আর্থিক ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, তার জন্য ওয়াকফের অর্থ খরচ করা হবে। রাজ্যসভার নেতা তথা বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা বলেন, ‘‘বিলটি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছেন বিরোধীরা। দেশের স্বার্থে ওই বিল আনা হচ্ছে।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়ার মতো দেশে ওয়াকফ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। মুসলিম দেশগুলি যদি পারে, তা হলে আমরা কেন সংস্কারমুখী পদক্ষেপ করব না?’’
সরকারের তরফে এই বিলের নেপথ্যে অন্যতম যুক্তি হল, ইউপিএ আমলের একটি সংশোধনী। তাতে বলা হয়, মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পত্তির ব্যাপারে ওয়াকফ আইন শেষ কথা বলবে। রিজিজুদের প্রশ্ন, এটা কী ভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব? পাল্টা যুক্তিতে কংগ্রেস সাংসদ নাসির হুসেন বলেন, ‘‘২০১৩ সালে সংসদের উভয় কক্ষে বিজেপি ওই বিল সমর্থন করেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে যখন আপনারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হলেন, তখন ওয়াকফের মতো বিষয় বেছে নিলেন, যাতে বিভাজনের রাজনীতি করতে পারেন।’’ গরিব মুসলিমদের উন্নয়নের যুক্তি নিয়ে নাসেরের কটাক্ষ, ‘‘গত ১১ বছরে মুসলিমদের উন্নয়নে আপনারা কী করেছেন? ওয়াকফ কাউন্সিলের বাজেট পর্যন্ত বরাদ্দ করেননি। একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ডও নেই। ওয়াকফ সংশোধনী সংবিধান-বিরোধী।’’
বিল পেশ করার সময়ে রিজিজু দাবি করেছিলেন, সব মিলিয়ে ওই বিল সংক্রান্ত প্রায় এক কোটি পরামর্শ জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ক’টি পক্ষে আর ক’টি বিপক্ষে সেই তথ্য সরকারের কাছে দাবি করেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জাভেদ আলি খান। আয় বাড়ানোর জন্য বিল আনার যে যুক্তি সরকার দিচ্ছে, তা নিয়ে জাভেদের প্রশ্ন, ‘‘ওয়াকফ সম্পত্তির ৬০ শতাংশ হল কবরস্থান। ওই কবরস্থান থেকে কী ভাবে আয় বাড়াবে সরকার?’’
কংগ্রেসের আর এক সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি, এই আইন যা দিচ্ছে, তার চেয়ে কেড়ে নিচ্ছে বেশি। শবরীমালা মামলার উদাহরণ তুলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সে সময়ে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা সকল ধর্মের জন্য প্রযোজ্য। বলা হয়েছিল, কোনও প্রথা বা ধর্মাচরণ যদি সেই ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়, তা সংবিধানের ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুরক্ষিত। যদি আইন কোনও ধর্মের প্রতিষ্ঠান চালাতে বাধা দেয়, সেই আইন অসাংবিধানিক। আদালতে এই বিলকে চ্যালেঞ্জ করা হবে।’’
তবে বিজেডি-র অবস্থান পরিবর্তনে কিছুটা অস্বস্তিতে বিরোধী নেতৃত্ব। বর্তমানে রাজ্যসভায় বিজেডি-র সদস্য সংখ্যা সাত। আজ বিজেডি সাংসদ সস্মিত পাত্র দলের সাংসদদের ‘অন্তরাত্মার ডাকে ভোট দেওয়া’র আহ্বান জানান। এরই মধ্যে ওয়াকফ বিল নিয়ে অবস্থানের বিরোধিতা করে আজ নীতীশ কুমারের দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মহম্মদ কাসিম আনসারি। তাঁর বেরিয়ে যাওয়া সাংগঠনিক ভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও, নীতীশের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।