প্রতীকী ছবি।
হাতে রয়েছে মাত্র দু’মাস। সব কিছু ঠিক থাকলে এপ্রিল মাস থেকেই লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়ে যাবে দেশ জুড়ে। তারই প্রস্তুতিতে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা নির্বাচন কমিশনের অলিন্দে।
গত কয়েক বছর ধরেই ইভিএমে কারচুপির অভিযোগে বিব্রত হতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বিরোধীরা সরব এ নিয়ে। এ দেশে ইভিএম নির্মাতা ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের প্রাক্তন কর্মী আজ লন্ডনে দাবি করেছেন, ভারতের ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে ভোটারদের সন্দেহ দূর করতে উদ্যোগী হল কমিশন। তারা জানিয়েছে, প্রতিটি ইভিএমের সঙ্গেই ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেল বা ভিভিপ্যাট যন্ত্র লাগানো হবে। সেটিতে কোনও ভোটার কাকে ভোট দিলেন তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফুটে উঠবে। ভোটার দেখতে পাবেন তাঁর ভোট শেষ পর্যন্ত কার ঘরে পড়ল। এতে কারচুপির অভিযোগ বন্ধ করা যাবে বলেই দাবি কমিশনের। যদিও বিরোধীরা সেই যুক্তি মানতে নারাজ। সম্মিলিত বিরোধীদের দাবি, ইভিএমের পরিবর্তে ফের ব্যালটে ভোট হোক। কারণ ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ডের মতো বহু দেশই ইভিএম বর্জন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ গুটিকয়েক দেশে এর ব্যবহার চালু আছে। তবে ভোটের একেবারে দোরগোড়ায় এসে এটা করা কঠিন বুঝে কংগ্রেসের দাবি, সব ইভিএমে ভিভিপ্যাট থাকবে। কিন্তু গণনায় ভিভিপ্যাট যাচাই হবে মাত্র ২-৩%! এটা চলতে পারে না। অন্তত ৫০% পেপার ট্রেল মিলিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া লন্ডনে তোলা অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তদন্ত করতে হবে বলেও দাবি জানান কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভী।
২০১৯-এর ভোটে ২২ লক্ষ ইভিএম, ১৬ লক্ষ কন্ট্রোল ইউনিট এবং সাড়ে ১৭ লক্ষ ভিভিপ্যাট যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। কমিশন জানিয়েছে, ইভিএম আগে থেকেই তাদের কাছে রয়েছে। ৮০% ভিভিপ্যাট যন্ত্র ইতিমধ্যেই কমিশনের ঘরে চলে এসেছে। দু’মাসের মধ্যে বাকিটাও সংগ্রহ করা যাবে। এই প্রথম লোকসভা ভোটে ভিভিপ্যাট ব্যবহার হবে। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সব ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মেশিন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যাতে নির্বাচনের দিন যান্ত্রিক ত্রুটি যতটা সম্ভব এড়ানো যায়। একই সঙ্গে ভোটকর্মীরা যাতে ওই মেশিনগুলি হাতে-কলমে চালানোর প্রশিক্ষণ পান, তার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
চলতি মাসেই সব রাজ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক রাজ্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। গোটা দেশে ভোট করতে রাজ্য পুলিশ ছাড়াও প্রায় দু’লক্ষ আধাসেনা চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। বাহিনী পাঠাতে সাহায্য চাওয়া হয়েছে রেলের। দেশের দুর্গম প্রান্তে পৌঁছতে কিংবা মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা ও জম্মু-কাশ্মীরে শান্তিতে ভোট করাতে প্রায় দু’ডজন হেলিকপ্টার চেয়েছে কমিশন। লাগবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়িও।
মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে কমিশন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সাত থেকে আট পর্বে নির্বাচন হবে গোটা দেশে। যা শুরু হবে এপ্রিলে। শেষ হবে মে মাসে। লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ,
ওড়িশায়। রাজ্যপালের শাসনে থাকা জম্মু-কাশ্মীরেও এক ধাক্কায় বিধানসভা নির্বাচন সেরে ফেলার পক্ষপাতী কমিশন। তবে ওই রাজ্যে দু’টি নির্বাচন এক সঙ্গে হবে কি না, তা নির্ভর করছে উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপরে।