ফাইল ছবি
নিজামের শহরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে বিরোধী শিবিরের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিন্হাকে জেতানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান শাসনে এই দেশ তার সবথেকে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই সংবিধানকে রক্ষা করতেই বিরোধীরা যশবন্ত সিন্হাকে প্রার্থী করে সংবিধানকে রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে।’’
আজ থেকেই হায়দরাবাদের হাইটেক সিটিতে শুরু হয়েছে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক। উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে আজই সকালে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর সফর সেরে হায়দরাবাদের বেগমপেট বিমানবন্দরে এসে নামেন যশবন্ত সিন্হা। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, তাঁর পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী কে তারক রামারাও-সহ মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। সেখান থেকে বাইকে শোভাযাত্রা করে নেকলেস রোডের পিপ্লস প্লাজ়ায় আসেন যশবন্ত। সেখানে একটি জনসভায় হিন্দিতে বক্তৃতা করেন কেসিআর। মনে করা হচ্ছে জাতীয় দলগুলিকে বার্তা দিতেই তাঁর এই পদক্ষেপ। বিকালে রাজ্যের কংগ্রেস ও আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোট কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন যশবন্ত। রাতে বেঙ্গালুরু উড়ে যান তিনি।
কয়েক মাস আগে যখন প্রধানমন্ত্রী হায়দরাবাদ এসেছিলেন, সে সময়ে তাঁকে এড়াতে বেঙ্গালুরু চলে গিয়েছিলেন কেসিআর। আজও যশবন্তের শহরে আসাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো এড়িয়ে যান তিনি। পরিবর্তে উপস্থিত ছিলেন রাও মন্ত্রিসভার পশুপালন ও মৎস্যমন্ত্রী তালাসানি শ্রীনিবাস যাদব। হায়দরাবাদের মাটিতে বারংবার শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উপেক্ষা করা নিয়ে আজ সরবও হন বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে জোর দিয়ে এসেছেন। অথচ চন্দ্রশেখর রাও যা করে চলেছেন তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক আচরণ। তিনি কেবল সাংবিধানিক পদের অমর্যাদা করছেন তা নয়, প্রোটোকল ভেঙে ব্যক্তি নয় প্রতিষ্ঠানের অপমান করছেন।’’
হার নিশ্চিত জেনে গোড়া থেকেই দায় এড়াতে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বাছার প্রশ্নে গা-ছাড়া মনোভাব দেখিয়ে এসেছিল কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রের এনসিপি ও উদ্ধব ঠাকরে শিবির মৌখিক ভাবে যশবন্তকে সমর্থন করলেও অন্য বিরোধী দলের মতো লিখিত ভাবে সমর্থন জানায়নি তারা। যশবন্তের নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে প্রস্তাব করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। অথচ গত কাল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দ্রৌপদী মুর্মুর নাম আগে ঘোষণা হলে সমর্থনের বিষয়ে ভেবে দেখতেন বলে মন্তব্য করে বসেন। এতে বিরোধী ঐক্য নতুন করে সংশয়ে পড়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন বামেরা। এই নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য যখন খানিকটা টলমল, তখন কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই যশবন্তের জন্য মাঠে নামলেন চন্দ্রশেখর রাও। এর আগে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করার জন্য বিরোধীদের বৈঠকে কিন্তু তিনি ডাক পেয়েও যাননি। তা ছাড়া নরেন্দ্র মোদীর আট বছরের শাসনে কেন্দ্রের কোনও সিদ্ধান্ত সমর্থন বা বিরোধিতার প্রশ্নেও বরাবর দূরত্ব রেখে চলাই পছন্দ করতেন রাও। কিন্তু তেলঙ্গনায় প্রধান বিরোধী দল হিসাবে বিজেপির ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে টিআরএস নেতৃত্বকে।
সূত্রের মতে, আসন্ন বিধানসভায় দু’ শিবিরের মধ্যেই যে প্রধানত লড়াই হতে চলেছে তা অনুধাবন করে এখন থেকেই তীব্র মোদী-বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাও। আজ তাই নিজের বক্তব্যের বড় অংশ জুড়ে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘নোট বাতিল থেকে শুরু করে কৃষিনীতি, কিংবা দেশের নিরাপত্তা— সব ক্ষেত্রেই মোদী সরকার গত আট বছরে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। সংবিধানকে রক্ষার প্রশ্নে সব দলের উচিত যশবন্তের সমর্থনে এগিয়ে আসা।’’ এমনকি শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত গুজরাতের একটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার জন্য তদ্বির করে ভারতের নাম খারাপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, এই অভিযোগেও সরব হন রাও। পাল্টা জবাবে আজ পরিবারবাদের রাজনীতির প্রতি আক্রমণ শানিয়ে স্মৃতি বলেন, ‘‘কেসিআরের মন্ত্রিসভার অর্ধেক তো পরিবারের লোকে ভর্তি। রাও পরিবারের কাছেরাজনীতি সার্কাস হতে পারে, কিন্তু বিজেপি কর্মীদের কাছে রাজনীতি মানে দেশ গঠন।’’